চিরিরবন্দরে ছিন্নমূল পল্লীর বসতভিটা জবর দখল, ছিন্নমূলদের উচ্ছেদের পায়তারা

0
465

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে:
সৈয়দপুর শহরের উপকন্ঠে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ এলাকায় আদর্শ ছিন্নমূল গুচ্ছগ্রামের প্রতি এলাকার প্রভাবশালীদের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে। জবর দখল করা হচ্ছে ছিন্নমূল পরিবারের বসত ভিটা। ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে দুই ছিন্নমূল পরিবারের জমি ভিটা। গত বুধবার সরেজমিনে গেলে হতদরিদ্র লাইলি বেগমের বসতভিটা জবরদখলের চিত্র চোখে পড়ে। এর আগে দখল করা হয়েছে ছিন্নমূল ছবিরনের বসতভিটা। আর এ দখলবাজির ঘটনায় জড়িত আছেন এলাকার অপরাধ চক্রের হোতা একরামুল হক। তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন। ধীরে ধীরে পুরো ছিন্নমূল পল্লী গ্রাস করার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৮ আগষ্ট একরামুল বাহিনীর হাতে লাি ত হন চার ছিন্নমূল পরিবার। এরা হলেন নুর নাহার, ছামিনা বেওয়া, তারাবিবি ও ময়জান বেগম। গুরুতর আহত হয়ে তারা চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকদিন ভর্তি ছিলেন। এর আগে একই ধরনের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠক হলে একরামুল বাহিনী সালিসের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক ওই পল্লীতে নির্বিঘেœ অপরাধ কর্ম চালিয়ে আসছে। কথা হয় ওই পল্লীর বাসিন্দা ছিন্নমূল রোফিকা, বিউটি, সালমা, মেহেরুন, গোলাপজান, হেনা, কমলা, কমিলা তারা বেগম, সামিয়া, নুরজাহান ও মহিজন বেগমের সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে জানান, দাঙ্গাবাজ ও অপরাধ চক্রের হোতা একরামুল হক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদে ছিন্নমূল পল্লীতে মাদক বেচাকেনার আখড়া গড়ে তুলেছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে দেহ ব্যবসা। এসব অপরাধের প্রতিবাদ করলে একরামুল বাহিনীর হাতে শারিরীক ও মানসিকভাবে লাি ত হতে হয়। এমন অবস্থায় পল্লীর অনেকেই বাড়ি ছেড়ে ভাসমান জীবন যাপন শুরু করেছেন। এলাকার প্রতিবেশী বাসিন্দারা জানান ওইসব ছিন্নমূল পরিবারগুলো আগে সারাদিন সৈয়দপুর শহরে দিনের বেলা ভিক্ষা করতেন, আর রাতের বেলা রেল স্টেশন ও শহরের ফুটাপাতে রাত কাটাতেন। তাদের দুর্দশা দেখে সৈয়দপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন সরকার এসব ছিন্নমূল পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। বিগত ১৯৯৬ সালে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লাইফ বাংলাদেশের আর্থিকসহায়তায় সৈয়দপুর শহরের উপকন্ঠে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার দেবীগঞ্জ হাট সংলগ্ন চক ইসব মৌজায় এস এ ৪৮ নং খতিয়ানভুক্ত ৪৪ শতক জমি ক্রয় করে ১৬ টি পরিবারের প্রত্যেককে পৌণে তিন শতক করে জমি সাফ কবলা করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের তৈরী করে দেয়া হয় টিনের চালার থাকার ঘর। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ছিন্নমূলরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে বসবাস করছে। এদিকে বেশ কয়েক বছর আগে হতদরিদ্র লাইলী বেগম মারা যায় এবং তার বসতভিটার জায়গাটি পরিত্যক্ত হলে পল্লীর মানুসরা তা সামাজিক কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে । এমন অবস্থায় ওই পরিত্যক্ত জায়গাটির ওপর শ্যেন দৃষ্টি পড়ে একরামুলের। সে গত মঙ্গলবার তা জবরদখল করে সেখানে টিনের ঘর তোলে। তার এ কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন।
ছিন্নমূল পরিবারের বসতভিটা জবর দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে একরামুল হক জানান, ছিন্নমূল লাইলীর বসত ভিটার পজেশন টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি, দখল করিনি। অন্যায় কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতার অভিযোগ বিষয়ে সাবেক ফতেজংপুর ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন আমি জীবনে অন্যায় করিনি আজও করছিনা। ফতেজংপুর ইউপির ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মতিউর রহমান বসতভিটা জবরদখলের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ফতেজংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ লুনার মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি সুরাহা করার জন্য থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে, চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ হারিছুর ইসলাম জানান, জবর দখলের ঘটনার বিষয়ে দখলাবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here