চা বিক্রেতা রাজু জিপিএ ৫ অর্জন করে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে

0
394

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট : দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জারিত চা বিক্রেতা রাজু আহমেদ প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্ন পুরনে বড় বাঁধা অভাব নামক দানবের শত বাঁধা পেরিয়ে অদম্য মেধাবি রাজু এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। রাজু আহমেদ লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ধরলা চরা ল দক্ষিণ শিবেরকুটি এলাকার মৃত তছের আলীর ছেলে। সে রথনাই ব্রীজের বাঁধের উপর চা বিক্রি করে।
স্থানীয়রা জানান, রাজু’র বাবা তছের আলী রথনাই ব্রীজের বাঁধের উপর একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে চা বিক্রি করত। গত ২০১০ সালে হৃদয়যন্ত্রের ক্রিড়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। একমাত্র ছেলে রাজুকে নিয়ে মহাবিপাকে পড়েন মা রেজিয়া বেগম। জিবন বাঁচাতে মা ছেলে মিলে ওই চায়ের দোকান চালু করেন তারা। দোকান ঘর মালিক মা ছেলের সংগ্রাম দেখে ভাড়া মওকুফ করে দেন।
চা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা চালিয়ে যায় রাজু। পিএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ ৪.৮৫ অর্জন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। সংসারে দৈন্যদশা ও চা বিক্রির ব্যস্থতায় জেএসসি পাশ করেই বন্ধ হতে বসেছিল পড়াশুনা। বিদ্যালয় ছুটির পর থেকে রাত অবধি চা বিক্রি শেষে লেখা পড়ায় মগ্ন হয় রাজু। অনেক সময় দোকানেও বই পড়ত সে।
জিবনের বড় ইচ্ছা নিজেকে প্রকৌশলী করে গড়ে তুলতে সকল সিঁড়ি অতিক্রম করা। এ ইচ্ছা শক্তি সকল বাঁধাকে অতিক্রম করে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করে রীতিমত পুরো এলাকায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছে রাজু আহমেদ। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এসএসসি পরীক্ষার সময় মা রেজিয়া বেগম শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে দোকান বন্ধ রেখে ধার দেনা করে মায়ের চিকিৎসা আর ঘরে বসে নিরবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয় সে। পরীক্ষা শেষে আবারো খুলে যায় রাজু’র চায়ের দোকান। দোকানের পাশেই রাস্তার ধারে একটা জীর্ন ঘরে মা ছেলের মানবেতর জিবন যাপন। চায়ের দোকানের অদুরেই ছিল বিদ্যালয়। তাই কোন সমস্যা হয়নি লেখা পড়ায়। ক্লাশ শুরুর মুহুর্তে দোকান মায়ের উপর ছেড়ে দিয়ে শ্রেনী কক্ষে যেত রাজু। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলে তো বাহিরে থাকতে হবে। তবে কি করে চলবে তার সংসারের চাকা আর কি করেই চলবে পড়াশুনার খরচ- এসব প্রশ্নই তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
রাজু আহমেদ বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়- এ বাক্যটিকে মেনে নিয়ে এতদুর এগিয়েছি। জিবন মানেই সংগ্রাম। লেখাপড়ার সাথে আমাকে দারিদ্রতা মোকাবেলায় বাড়তি সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। “চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতের মত এতবড় দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে আমি চা বিক্রেতা রাজু প্রকৌশলী হতে পারব না কেন? – প্রশ্ন তুলেন রাজু।
রাজু’র মা রেজিয়া বেগম বলেন, অনেক বার কইছি হামরা গরিব মানুষ। লেখাপড়া করে হামার লাভ কি? আর এত টাকা কোনটে পামো। কিন্তু রাজু ইনজিয়ার (ইঞ্জিনিয়ার) হবার জন্যে চা দোকান করে ফির পড়াও পড়ে। ইনজিয়ার হইতে কত টাকা নাগে বাহে?। চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রীস আলী জানান, রাজু খুবই মেধাবী ও জেদি ছেলে। সে যা বলে সেটা করেও দেখায়। অভাবের ওই পরিবার থেকে এমন সাফল্য দেখানোয় তাকে প্রায় সময় সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। সহযোগিতা পেলে রাজু তার স্বপ্ন পুরন করবে বলেও দাবি করেন তিনি।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here