চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ, রোগীদের চরম দুর্ভোগ

0
229

খবর ৭১ঃচট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনিস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট প্র্যাকটিস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।

রোববার দুপুরে বিতর্কিত ম্যাক্স হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানের পর জরুরি সভা ডেকে ওই হাসপাতালটির মালিক বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান এ ঘোষণা দেন।
রোববার দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ে অবস্থিত বিএমএ কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। তাদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ।

এদিকে রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায় অন্যায্য ও অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা কথায় কথায় রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের প্রবণতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকদের প্রতি।

রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, নতুন কোনো রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। আগে ভর্তি হওয়া রোগীদের অনেকেই উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভিড় করছেন। সেখানেও উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে।

অন্যদিকে নগরীর বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালকে নানা অনিয়মের অভিযোগে ৪ লাখ জরিমানা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। রোববার বিকালে নগরীর গোলপাহাড় এলাকার এ হাসপাতালকে এ জরিমানা করা হয়। র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এ আদেশ দেন।

র‌্যাব জানায়, অনুমোদনহীন ওষুধ ব্যবহার, একটি ফার্মেসির লাইসেন্স নিয়ে দুটি ফার্মেসি পরিচালনাসহ নানা অনিয়মের কারণে এ জরিমানা করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সমন্বয়ে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এসব অনিয়ম পাওয়া যায়। সিএসসিআর হাসপাতালে দুটি ফার্মেসি রয়েছে। একটি নিচতলায় এবং অপরটি সপ্তম তলায়। এর মধ্যে নিচতলার ফার্মেসির লাইসেন্স থাকলেও সপ্তম তলার ফার্মেসির কোনো লাইসেন্স নেই।

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান জানান, নানা অনিয়নের অভিযোগে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এ হাসপাতালকে। এ অভিযান আরও ৩-৪ দিন চলবে। স্বাস্থ্য খাতে শৃংখলা আনতে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বিকাল ৪টায় নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন গোলপাহাড় মোড় এলাকায় অবস্থিত সিএসসিআর হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় বসে আছে ইমন (২৬) নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘আমার বড় বোন নাসরিন আকতার (২২) গত ২ জুলাই ফটিকছড়ি হেঁয়াকো সড়কে দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন এগুলো করানোর জন্য প্রথমে বেসরকারি এপিক ও সেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা পরীক্ষা করেনি। শুনেছি তারা নাকি ধর্মঘট ডেকেছে। কয়েকটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে সিএসসিআর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে দেখি এখানেও একই অবস্থা। এখন কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ডাক্তাররা এভাবে রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করলে রোগীরা কোথায় যাবো?’

এর আগে নগরীর মেহেদীবাগ এলাকায় অবস্থিত বিতর্কিত ম্যাক্স হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে আগে থেকে চিকিৎসাধীন রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। নতুন করে এ হাসপাতালটিতে নেয়া হচ্ছে না রোগী ভর্তিও।

বিকাল ৩টায় দেখা যায়, একসঙ্গে চারজন রোগীকে ম্যাক্স হাসপাতাল থেকে স্বজনরা নিয়ে যাচ্ছেন।

সুজয় তালুকদার নামে নগরীর আসকার দিঘী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত ৪ জুলাই আমার স্ত্রীর অনু তালুকদারকে বুকে ব্যথা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করাই। হাসপাতালের ৭০৬ নম্বর কেবিনে রাখা হয় তাকে।

রোববার সকাল থেকে তাকে দেখার জন্য কোনো ডাক্তারই আসেননি। তারা নাকি চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘট ডেকেছে। এখানে চার দিনের ৪১ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’

এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর বড় ভাই মো. সুজন বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় আমার ছোট ভাই মো. উজ্জলকে (১৮) নিয়ে নগরীর পাহাড়তলী থেকে এসেছি। সে জন্ডিসে আক্রান্ত। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সেখানে ডাক্তাররা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে না। আমার ছোট ভাইয়ের অবস্থা উন্নতির চেয়ে অবনতিই বেশি হচ্ছে।’

ম্যাক্স হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে আসা হরি সাধন সাহা জানান, ‘আমি রাঙ্গুনিয়া থেকে ডাক্তারদের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে এসেছি। ১ হাজার ৭০০ টাকাও জমা দিয়েছি। তারা পরীক্ষা করাচ্ছে না। শুনেছি তাদের পরীক্ষায়ও ভেজাল আছে। এজন্য পুনরায় টাকা ফেরত চাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘অতি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে ডাক্তারদের ধর্মঘট ডাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। ডাক্তারি পেশাটা হচ্ছে সেবামূলক। সমাজের অগ্রগণ্য পেশার লোক তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে ত্রুটি থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হবে। কেননা ত্রুটি নিয়ে হাসপাতাল চললে সেখানে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। সেখানে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবে কাম্য নয়।’

খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here