গ্রীষ্মের শুরুতেই পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কবলে পাইকগাছার জনজীবন বিপর্যস্ত॥কতৃপক্ষের দাবি বিদ্যুৎ বিভ্রাট নেই

0
247

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা)ঃ
গ্রীষ্মের শুরুতেই অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কবলে পাইকগাছার জনজীবন রীতিমত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি চিংড়ি উৎপাদন ভরা মওসুমে বরফ উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি বন্ধ হতে চলেছে মিল,কল-কারখানাগুলো। বৈশাখের প্রচন্ড দাবদাহে পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœতাসহ প্রভাব পড়েছে অফিস-আদালতেও। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ নিয়ে দূর্ভোগ বর্তমানে চরমে পৌছেছে। দিন-রাত মিলে অন্তত ৫/৭ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে আর আসছে। কখনো কখনো বিদ্যুৎ গিয়ে আর দেখা মিলছেনা কয়েক ঘন্টার মধ্যে। আর আকাশে মেঘ জমলে তো কথাই নেই। কোন কোন রাতে বিদ্যুৎ গেলে আসছে পরের দিন। বিদ্যুতের এমন যাওয়া-আসায় স্থানীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আন্দোলন-সংগ্রাম। সেখান থেকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে আল্টিমেটাম দেওয়া হলেও কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছেনা। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় জোনাল অফিসের দাবি তার এলাকায় কোন বিদ্যুৎ বিভ্রাট নেই।

জানাগেছে,দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে পাইকগাছা পৌর সভা ও উপজেলর ১০ টি ইউনিয়নে লোডশেডিংয়ের অবস্থা ভয়াবহতায় রুপ নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে এবার গ্রীষ্মের শুরুতেই বেড়েছে তাপমাত্রা। কয়েক দিন হল বৃষ্টির দেখা নেই। দিনের দাবদাহ রাতেও অপরিবর্তিত থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন পাইকগাছায় নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ,প্রায় প্রতি দিনই নতুন নতুন এলাকায় বিত্যুতায়িত করা হলেও পল্লী বিদ্যুতের সেবার মান রয়ে গেছে সেই পুরনো অবস্থানেই। চারিদিকে উন্নয়নের গন জোয়ারের ধূয়ো তুললেও এনিয়ে যেন কারো মাথা ব্যথা নেই এতটুকু। এনিয়ে পাইকগাছা নাগরিক কমিটির ব্যানারে ইতোমধ্যে কয়েক আলোচনা সভা ও মানব বন্ধন এবং সেখান থেকে নির্দিষ্ট সময়ের আল্টিমেটাম দিয়ে বৃহৎ কর্মসূচীর ঘোষণা আসলেও কর্ণগোচর হচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। এমন পরিস্থিতিতে পল্লী বিদ্যুতের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমশ তিব্রতর হচ্ছে। যে কোন সময় এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনে যেতে পারে বলেও প্রচার হচ্ছে নাগরিক কমিটি থেকে।
জানা যায়, পাইকগাছা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাইকগাছা জোনাল অফিসের আওতায় পৌর সভা সহ উপজেলার প্রায় ৪শ’গ্রামে আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলে প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহক বা সংযোগ রয়েছে। যা জন্য প্রতিদিন পিক আওয়ারে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬ টাকা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ৭ থেকে সাড়ে ৭ মেগা ওয়াট এবং অফ পিক আওয়ারে রাত ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সাড়ে ৩ থেকে ৪ মেগা ওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাইকগাছা জোনাল অফিসের ডিজিএম হাওলাদার ফজলুর রহমান জানান, পাইকগাছায় প্রকৃত পক্ষে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। বিভিন্ন সময় লাইনে কাজ করতে ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। তাছাড়া ৩৩ কেভি থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলে সেটা তাদের বিষয়না। এসময় তিনি আরো বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রায় প্রতি দিনই নতুন নতু এলাকায় বিদ্যুতায়ন হচ্ছে। স্পট মিটারিং এর আওতায় সরাসরি মেলার মাধ্যমেও গ্রাহকদের পৌছে দেয়া হচ্ছে সংযোগ। তিনি জানান,চলতি বছরের জানুয়ারীতে প্রায় ৬ শ’ ফেব্রুয়ারীতে ১২ শ’ ও মার্চ মাসে ১৫ শ ৪২ টি নতুন সংযোগ দিয়েছেন। তবে গ্রাহকদের দাবি,এত কিছুর পরও পল্লী বিদ্যুতের সেবার মান বাড়েনি এতটুকু। বিদ্যুৎ সমস্যা এই মূহুর্তে উপজেলাবাসীর প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কোন দিন খুলনার ট্রেণ লাইনে কাজ,কোন দিন গাছ-পালা কর্তন থেকে শুরু করে ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধের পাশাপাশি দি-রাতে সু-নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বন্ধ থাকছে বিদ্যুৎ। গ্রীষ্মের শুরুতে আকাশে মেঘ জমলেই আর রক্ষা নেই। ঝঁড়-বৃষ্টি হোক আর নাইবা হোক ঠুনকো অযুহতে বন্ধ থাকছে বিদ্যুৎ। কোন কোন রাতে বিদ্যুৎ গিয়ে আর আসছেই না। স্থানীয় কপিলমুনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাইন ইনচার্জ মোঃ নূর আলম জানান,জরুরী প্রয়োজনে ছাড়া তারা তাদের সাব স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করেননা। বাকী যে সময় টুকুতে বিদ্যুৎ যায় সেটার অর্থাৎ ৩৩ কেভির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নয়। তবে সাধারণ গ্রাহকরা এজন্য উৎপাদনের তুলনায় বেশি সংযোগ ও কতৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছেন।
পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি এফএমএ রাজ্জাক বলেন,বিদ্যুতের যাওয়া-আসা শুরু হয় মূলত সকাল থেকেই। ভোরে বিদ্যুৎ গিয়ে আসতে সময় নেয় বেলা ১১/১২ পর্যন্ত। এতে ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠের পাশাপাশি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে কল-কারখানাগুলোতে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখার উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে উপজেলার কপিলমুনি কপোতাক্ষ কম্পিউটার এন্ড প্রেসের স্বত্তাধীকারী মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, লোডশেডিং এর যাতাকলে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে অনলাইন ও প্রেস সেকশনে তারা মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সময় অনুযায়ী ডেলিভারী দিতে না পেরে প্রায় প্রতিদিনই কাষ্টমারদের সাথে তাদের কথাকাটাকাটি হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের উপরও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। বিদ্যুতের অভাবে জরুরী রোগী সাধারণের চিকিৎসা করাতেও নানা দূর্ভোগের সম্মখীণ হচ্ছেন সেখানকার কর্মরত চিকিৎসকরা।
এব্যাপারে প্ললী বিদ্যুতের এলাকা পরিচালক এম মাহমুদ আসলাম বলেন,চাহিদা অনুযায়ী প্রায় কাছাকাছি পরিমাণ বিদ্যুৎ পাচ্ছেন তারা। উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট বলে কিছু নেই। খুব কম সময়ের ,মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুতের উপজেলা ডিজিএম ফজলুর রহমান ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ৭ টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত ও ১৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে অন্যান্য সময়ে লাইনে কাজ কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে বলে জানান তিনি। এছাড়া এলাকায় কোন লোড শেডিং নেই বলেও দাবি এ কর্মকর্তার।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফকরুল হাসান জানান,পাইকগাছা ডিজিএমের সাথে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং’র ব্যাপারে তার কোন হাত নেই।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here