গ্যাস সরবরাহ কম, চুলা জ্বলছে না রাজধানীর বাসাবাড়িতে

0
297

খবর৭১ঃসাথী বিশ্বাস গত সাড়ে তিন বছর ধরে নয়াপল্টনের বক্সকালভার্ট এলাকার থাকছেন। এ সময়ে কোনো গ্যাস সংকটে পড়তে হয়নি তাকে।

কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে গ্যাস থাকছে না, থাকলেও টিম টিম করে জ্বলছে চুলা। এতে রান্নাবান্ন করতে গিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে।

ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে ত্রুটি থাকায় গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে দিনের বেলা চুলা জ্বলছে না।

পাশাপাশি চরম সংকটে পড়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো।

বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) বলছে, ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ কমে গেছে।

ফলে প্রতিদিন ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে তিতাস, যা স্বাভাবিক সরবরাহের প্রায় ৯ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কল কারখানার চাহিদা পূরণে জোর দিতে হচ্ছে। ফলে গত তিন দিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী।

শাহীনবাগ এলাকার বাসিন্দা বীথি চৌধুরী বলেন, তার এলাকায় গত পাঁচ-ছয় মাস ধরেই গ্যাসের সমস্যা চলছে। তবে গত কয়েক দিনে তা আরও বেড়ে গেছে।

লালমাটিয়া ‘সি’ ব্লকের কাকলী আক্তার, বাড্ডা এলাকার মহুয়া সৈয়দা, শ্যামলী এলাকার জান্নাত চামেলী ও সাদিয়া বিনতে সিদ্দিকী, আজিমপুরের সানাউল হক সানী একই রকম চিত্রের কথা জানিয়েছেন।

কাদেরাবাদ হাউজিং, মোহাম্মদপুর, কাটাসুর, জাফরাবাদ এলাকাতেও দিনের বেলায় রান্না করা যাচ্ছে না বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন।

মহাখালীর ইউরেকা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সার্ভিস ইঞ্জি. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের স্টেশনে ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস আসার কথা, বাস্তবে চাপ থাকছে এর চেয়ে অনেক কম। কখনও কখনও পাঁচ পিএসআইয়ের নিচে নেমে যাচ্ছে।

তিনি জানান, চাপ কম থাকায় তাদের স্টেশনের দুটি ইঞ্জিনের মধ্যে একটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অন্যটিতেও গ্যাস দিতে সমস্যা হচ্ছে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য মিরপুর ও আশপাশের এলাকায় গত দুই বছরে বেশ কয়েক দফা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

এখন সরবরাহ কম থাকায় আবার ভুগতে হচ্ছে মিরপুর ও পল্লবী এলাকার বাসিন্দাদের।

এ ছাড়া খিলক্ষেত, যাত্রাবাড়ী, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন, মগবাজার, হাজারীবাগ, দক্ষিণখান, গ্রিন রোড, নিকুঞ্জ, জামতলা এলাকাতেও দিনের বেলায় চুলায় গ্যাস থাকছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, গত রোববার থেকে সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে। ফলে তিতাসের সেবা পরিধিভুক্ত এলাকায় গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে।

তিনি জানান, এ মৌসুমে সার কারখানাগুলো চালু থাকায় সেখানে গ্যাস বন্ধ রাখা সম্ভব না। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না। বিকালে সিএনজি পাম্পগুলো বন্ধ হলে বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ কিছুটা বাড়ছে।

কবে নাগাদ সমস্যার সমাধান হবে জানতে চাইলে তিতাসের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমরা তো আশা করে আছি, যে কোনো সময় এটি ঠিক হয়ে যাবে। সমাধানের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন বলেন, ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছিল জাতীয় গ্রিড। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত রোববার থেকে গ্যাস আসছে না। কর্তৃপক্ষ সেটি মেরামতের চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ পাওয়ায় অনেক বড় বড় কারখানা চালু করা হয়েছিল। এখন এলএনজি থেমে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) পরিচালন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান খান জানান, তিতাসের সেবার আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন ১৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে আসছিলেন তারা। অবশ্য সেটিও চাহিদার তুলনায় কম।

কামরুজ্জামান বলেন, কিন্তু ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে গত তিন দিন ধরে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম আসছে। এর প্রভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলায় গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না।

জিটিসিএল ও পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড, শেভরন, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, তাল্লো গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

এর সঙ্গে আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে আরও ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে আসছিল।

সারা দেশে সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও তা কখনই পূরণ করা যায় না।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here