গোপালগঞ্জে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ঘরছাড়া একটি পরিবার নেপথ্যে রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান শুকান্ত বিশ্বাস

0
528

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : আমার ছেলে অমিত বিশ্বাসের সাথে প্রতিবেশী দুলাল বিশ্বাসের মেয়ে চায়না বিশ্বাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এ সম্পর্ক দুলাল বিশ্বাস মেনে নিতে পারেনি। অমিতকে তাদের বাড়িতে যেতে ও চায়নার সাথে কথা বলতে নিষেধ করে দুলাল বিশ্বাস ও তার লোকজন। এর ব্যতিক্রম হলে অমিতকে মারপিট ও খুন জখম করার হুমকি দেয়া হয়। বিগত ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল চায়নার একটি ব্রেসিয়ার উঠানে টানানো দড়িতে শুকাতে দেয়া হয়। অমিত সে দিন ওই বাড়িতে গিয়ে ইয়ারকি করে চায়নার ব্রেসিয়ার সেখান থেকে ফেলে দেয়।
এ ঘটনার জের ধরে দুলাল বিশ্বাস ও তার লোকজন ওই দিন রাতে তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে বাড়ির পাশের একটি গাছের সাথে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। হত্যাকারীরা এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। এরপর থানায় ইউডি মামলা হয়। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়। এরপর আমি দুলাল বিশ্বাস, মৃনাল বিশ্বাস, নিভা বিশ্বাস, ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাসসহ ১১ জনকে আসামী করে গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট মামলাটি তদন্ত করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয়। পিবিআই এ মামলার আসামী অঞ্জন বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে। অঞ্জন বিশ্বাস ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। সেখানে সে অমিতকে হত্যা করতে দেখেছে বলে জানান। হত্যাকারীরা অমিতকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে। এ ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস, প্রতিবেশি দুলাল বিশ্বাস, মৃনাল বিশ্বাস, নিভা বিশ্বাস আমার আরো ৩ সন্তানকে হত্যা হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছে। হত্যাকান্ডের শিকার অমিতের দিন মজুর মা যুথিকা বিশ্বাস এ সকল অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের বৌলতলী গ্রামে।
এ সময় যুথিকা বিশ্বাস আরো বলেন, তারপর থেকে স্বামী, ১ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে আমি তালতলা গ্রামের বাবার বাড়িতে বসবাস করছি। আমি ও আমার স্বামী দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাই। ৩ ছেলে মেয়ে স্কুলে পড়ছে। দিন মজুরের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে সংসারই চলে না। তারপর প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ছেলে হত্যা মামলা চালাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। প্রভাবশালীরা প্রভাব খাঁটিয়ে এ মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে। পিবিআই মামলার তদন্তে ঢিলেমি করছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এস আই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: অরিফুর রহমান ফারাজী বলেন, মামলা ইতিমধ্যে ডিটেক্ট করা হয়েছে। আসামী অঞ্জন হত্যাকান্ডটি তার চোখের সামনে হতে দেখেছে বলে গত বছরের ১৬ মে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সে হত্যাকারীদের নামও বলেছে। আমি এ মামলার অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, অমিত দিন মজুরের সন্তান। তার দামী মোবাইলের প্রতি ঝোক ছিলো। এ জন্য সে মামাবাড়ি থেকে টাকা চুরি করে। এ নিয়ে সে তিন দিন বাড়িতে খায়নি। এ ছাড়া প্রতিবেশি চায়নার ব্রেসিয়ার নিজের পকেটে ভরে নিয়ে যায়। এ নিয়ে চায়নার বাবা দুলাল অমিতের বাবা অমৃত বিশ্বাসের কাছে নালিশ করে। এ সব বিষয় নিয়ে অমিতের বাবা তাকে ঘটনার দিন রাতে বকাঝকা করে। পরের দিন সকালে বাড়ির পাশের একটি গাছে অমিতের লাশ ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় আমি ঢাকা অবস্থান করছিলাম। বৌলতলীতে ছিলাম না। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট অমিত আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে সিআইডি এ মামলার ফাইনাল দিয়ে দেয়। এ ঘটনার কয়েকদিন পর আমাদের হয়রানী করতে যুথিকা বাদী হয়ে আমিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। এর আগে থেকেই যুথিকা স্বামী সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকছেন। কেউ তাকে বাড়ি ছাড়া করেনি। বাড়ি ছাড়া করার বিষয়টি সত্য নয়। আমরা উল্টো তাকে বাড়িতে আসতে বার বার অনুরোধ করেছি।
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক শংকর চন্দ্র মাতুব্বর বাদীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে মামলার তুলনায় লোকবল কম রয়েছে। এ জন্য তদন্তে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এ মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দ্রুতই আমরা আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করতে পারবো।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here