গোপালগঞ্জে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান রাজনীতির হালচাল

0
569

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। গন-সংযোগ, সভা-সম্মেলন ও অনুষ্ঠানাদিতে যোগদানসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে সরর হয়ে উঠেছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছেন।
গোপালগঞ্জ জেলা হচ্ছে আওয়ামীলীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মভূমি গোপালগঞ্জের নির্বাচনী আসনে প্রায় সবকটি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামীলীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। আওয়ামীলীগের এ ঘাঁটিতে অন্যদের শুধু অস্তিত্ব রক্ষার ও দলীয় পরিচয় টিকিয়ে রাখার চেস্টা। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবং অন্য ছোট ছোট দলগুলোর তৎপরতা তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের তৎপরতা নেই বললেই চলে।
গোপালগঞ্জ জেলার ৩টি আসনের মধ্যে গোপালগঞ্জ-১ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৩৩৫ জন। এর মধ্য পুরুষ ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৩ জন। মহিলা ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৮২ জন। এ আসনে ২০০১ সালে নির্বাচনে কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খাঁন (আ:লীগ) ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৯১ ভোটে বিজয়ী হন। প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী বিএনপির মেজর জেনারেল (অব:) মো: মহব্বতজান চৌধুরি পান ২০ হাজার ১৩৬ ভোট। ২০০৮ সালে বিজয়ী হন কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খাঁন। তিনি পান ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ২১৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপির প্রার্থী মো: সেলিমুজামান পান ৯ হাজার ৯৮৬ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবারও ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৩০৪ ভোটে পেয়ে কর্নেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খাঁন (আ:লীগ) নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী জাতীয় পার্টির দীপা মজুমদার পান ৫ হাজার ৮৬৩ ভোট। সে সময় বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। গোপালগঞ্জÑ২ আসনে ভোটের সংখ্যা ২ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫৮৬ ভোট। এর মধ্য পুরুষ ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪০ জন এবং মহিলা ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ১৮২ জন। এ আসনে গোপালগঞ্জ সদর ও কাশিয়ানির একাংশ। ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮২১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি প্রার্থী সাইফুর রহমান নান্টু পান ৮ হাজার ১৬৪ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও শেখ ফজলুল করিম সেলিম (আওয়ামীলীগ) ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ২৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (বিএনপি) পান ৭ হাজার ৬৪৩ ভোট। ২০১৪ সালে নির্বাচনে শেখ ফজলুল করিম সেলিম পুনরায় ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৯১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) কাজী সাহিন পান ৪ হাজার ৮৪ ভোট। এবারের নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থী অংশ নেয়নি। গোপালগঞ্জ ৩ আসনে ভোটের সংখ্যা ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৪৫ জন। মহিলা ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৯৯৯ জন। ২০০১ সালের নির্বাচনে (কোটালিপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ১৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি হাফেজ ওমর আহম্মদ (খেলাফত মজলিশ) পান ৭ হাজার ২২ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা (আওয়ামীলীগ) পুনরায় নির্বাচিত হন ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ১৫৮ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি এস এম জিলানী (বিএনপি) পান ৪ হাজার ৪৫১ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) প্রার্থী এ জেড অপু শেখ পান ২ হাজার ৪৩০ ভোট। বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ জেলায় ৩টি আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন, গোপালগঞ্জ-১ আসন (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী একাংশ) আসনে নির্বাচন সংসদ কর্নেল (অবঃ) মুহাম্মদ ফারুক খাঁন, মহিলা সংরক্ষিত আসনে সংসদ উম্মে রাজিয়া কাজল, দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মুকুল বোস, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছা সেবক লীগের অর্থ সম্পাদক কে এম মাসুদুর রহমান, যুবলীগের নেতা আতিয়ার রহমান দিপু। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আরিফা রহমান রুমা, ব্যারিষ্টার রাজিব খাঁন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন দলটির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীঁর, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান পটু, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান টুটুল, কেন্দ্রীয় সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন। এ ছাড়া ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মিজানুর রহমান মিজান, জাপার (এরশাদ) দীপা মজুমদার, বাসদের মোশায়েদ হোসেন ঢালী, জাসদ (ইনু) আজম শরিফ, জাসদ (আম্বিয়া) শহিদুল বাবর, হিন্দুলীগের রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস। তবে এ আসনে বিএনপি সেলিমুজ্জামান সেলিম ছাড়া দলের জন্য কোন নেতা মাঠে নেই। আওয়ামীলীগের মুহাম্মদ ফারুক খাঁন এমপি, মুকুল বোসসহ অনেক নেতাই মাঠে তৎপর আছেন। জাপার দীপা মজুমদার এ আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচন করেছিলেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here