গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কোর্টে ও অফিসে একই দিনে হাজিরা দেন

0
352

নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : এক কর্ম দিবসে আদালতে ও অফিসে হাজিরা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে। তিনি নারী নির্যাতন মামলার আসামী। বিষয়টি তিনি অফিসের কাছে গোপন করেছেন। আদালতের ধার্য্য তারিখে অফিসে ও কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন একই সাথে। সরকারি চাকরির বিধি আনুযায়ী কোন ফৌজদারি মামলায় হাজিরা বা স্বাক্ষ্য দিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীকে ছুটি নিয়ে কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। ওই কর্মকর্তা সরকারি বিধানের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে আদালতের ধার্য্য তারিখে আদালতে ও অফিসে একই সাথে হাজিরা দিয়ে চলেছেন। তার কর্মস্থল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদর। আর তাকে মামলায় হাজিরা দিতে হয় গোপালগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলী খানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলী খান একটি মামলায় গোপালগঞ্জ নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কোর্টে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারী, ৫ মার্চ, ২৭ মার্চ, ৮ এপ্রিল, ৭ মে, ২২ মে, ২৭ জুন, ১৫ জুলাই ও ১৭ জুলাই হাজিরা দিয়েছেন। এ সব তারিখে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হাজিরা খাতায়ও স্বাক্ষর করেছেন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানীর তারিখ ধার্য্য রয়েছে।
ওই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সময়িক বরখাস্তের দাবি জানিয়ে নারী নির্যাতন মামলার বাদী মুক্তা খানম গত ৫ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। মুক্তা খানম গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পারকুশলী গ্রামের ছামাদ শেখের কন্যা। বিষয়টি টের পেয়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে কৌশলে হাজিরা খাতাটি ৬ সেপ্টেম্বর সরিয়ে ফেলেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসে কর্মরত একাধিক কর্মরতা জানিয়েছেন।
মুক্তা খানম বলেন, গত ২০১৩ সালের ২৮ জুন আমার সাথে সিঙ্গারকুল পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত হাসমত খানের ছেলে মো: শাহ আলম খানের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৩ লাখ টাকা ও ২ লাখ টাকার স্বর্নালংকার এবং আসবাপত্র যৌতুক হিসেবে গ্রহণ করে শাহ আলম। এরপর থেকে যৌতুক এনে দেয়ার জন্য শাহ আলম আমার ওপর চাঁপ দিতে থাকে। গত ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর শাহ আলম আমাকে বাবার বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকার যৌতুক এনে দিতে বলে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটির এক পর্যায়ে আমি টাকা এনে দিতে অস্বীকার করে বাবার বাড়িতে চলে আসি। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করি। এরপর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আমার স্বামী শাহ আলম খান, তার চাচাত ভাই টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ইউসুফ খান, শাহ আলমের মা ফাতেমা বেগম, শাহ আলমের চাচাত ভাই আজাদ খান আমার বাবার বাড়িতে আসে। তারা আমার বাবার বাড়ির সবার কাছে এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চায়। পরে রাত ৮ দিকে তারা মাহেন্দ্র গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে সিঙ্গারকুল গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাহেন্দ্রটি পারকুশলী গ্রামের কামরুলের ফাঁকা ভিটার কাছে পৌঁছালে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন গাড়ি থামিয়ে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে যৌতুকের ৫ লাখ টাকা না দিয়ে যৌতুক মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বেদম মারপিট করে। পরে আমি গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। মুক্তা খানম আরো বলেন, এ ঘটনায় ২১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করি। এ ঘটনার জুডিশিয়াল তদন্তের জন্য ট্রাইব্যুনাল গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বীণা দাসকে দায়িত্ব দেয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বীণা দাস তদন্ত প্রতিবেদনে শাহ আলম, ইউসুফ খান, ফাতেমা ও আজাদ খানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন। এরপর আসামীদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। ইউসুফ খান আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। এছাড়া তিনি আদালতে ৯ কার্য দিবসে হাজিরাও দেন। এ সব কার্য দিবসে তিনি অফিসের হাজিরা খাতায়ও স্বাক্ষর করেছেন। এটি করে তিনি সরকারি চাকরি বিধি ভঙ্গ করেছেন। ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে তিনি অফিসের হাজিরা খাতাটি গায়েব করেছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মো: ইউসুফ খান অফিসে ও আদালতে এক সাথে হাজিরা দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, চাকরির বিধি অনুযায়ী এটি করা যায় না। ছুটি নিয়েই কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। আমি এক সাথে অফিসে ও কোর্টে হাজিরা দেইনি। প্রতিপক্ষ আপনাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে কোর্টে ও অফিসে এক সাথে হাজিরা দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তবে গত ৬ সেপ্টেম্বর আমার অফিস থেকে হাজিরা খাতা চুরি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি টুঙ্গিপাড়া থানায় জিডি করেছি। এখন নারী নির্যাতন মামলাটি বাদী ও আসামীদের মধ্যে মীমাংসার পর্যায়ে রয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: মাসুদ ভূইয়া বলেন, মুক্তা খানমের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পত্রটি ঢাকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।
উল্লেখ্য সম্প্রতি এক শিক্ষিকার দেওয়া নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় আসামী হয়ে মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুন্সি রুহুল আসলাম বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here