গুহায় যেভাবে বেঁচে ছিল ওরা!

0
351

খবর ৭১: থাইল্যান্ডে গুহার ভেতরে ১৭ দিন ধরে আটকে থাকার পর ১২ জন কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ চেষ্টার পর তাদের শেষ পর্যন্ত বের করে আনতে সক্ষম হয় ডুবুরিরা। দীর্ঘদিন এই কিশোরদের আটকেপড়া, বেঁচে থাকা এবং নিরাপদে উদ্ধারের বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

কিন্তু এত দিন কীভাবে বেঁচে ছিল তারা? বলা হচ্ছে, পাহাড়ের ভেতরে চুইয়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা পানি, ওয়াইল্ড বোয়ার নামক ফুটবল দলের একজন সদস্যের জন্মদিন উপলক্ষে তারা যে খাবারদাবার সঙ্গে করে নিয়েছিল সেসব খেয়ে এবং মেডিটেশন বা ধ্যান করেই তারা এত দিন নিজেদের জীবন রক্ষা করেছে।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওই ১২ কিশোরদের একজন পীরাপাত সম্পিয়াংজাই। ১৭ বছর বয়সে পরা এই কিশোরের জন্মদিন উপলক্ষে সারপ্রাইজ পার্টি করার জন্যে তারা গুহার ভেতরে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু পরে প্রবল বৃষ্টির কারণে গুহার ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করলে তারা পালাতে গিয়ে গুহার গভীরে চলে যায়।

তার জন্মদিন উপলক্ষে দলের অন্যান্য ছেলেরা খাবার কিনে নিয়ে গিয়েছিল। এবং ধারণা করা হচ্ছে, গুহার ভেতরে আটকা পড়ার পর এসব খাবার খেয়েই তারা বেঁচে ছিল।

বলা হচ্ছে, এই কিশোর ফুটবলারদের কোচ একাপল চানতাওং বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার কমে যাওয়ার আশঙ্কায় গুহার ভেতরে এসব খাবার খেতে রাজি হননি। ফলে ২ জুলাই ডুবুরিরা যখন এই ফুটবল দলটিকে গুহার ভেতরে খুঁজে পেল, তখন শারীরিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল ছিলেন কোচ একাপল।

উদ্ধারকারী দল থাই নেভি সিলের প্রধান অ্যাডমিরাল আরপাকর্ন ইওকোংকাওয়ে বলেন, বাচ্চাদের সন্ধান পাওয়ার পরই চিকিৎসকদের পরামর্শে বাইরে থেকে তাদেরকে খাবার দেয়া হয়। যেগুলোতে ছিল সহজে হজম হয় এমন ও শক্তিদায়ক খাবার। এছাড়া মিনারেলের মধ্যে ভিটামিন মেশানো হয়েছিল। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত জন্মদিনের খাবার খেয়েই বেঁচে ছিল তারা।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, গুহার দেয়াল থেকে যেসব পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়েছে সেসব পানি খেয়েছে বাচ্চারা। কারণ গুহায় প্লাবিত হয়ে যাওয়া বৃষ্টির পানি ছিল ঘোলা ও নোংরা।

এই কিশোরদের উদ্ধার করার পর চিকিৎসকরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলেছেন, তারা ভালো আছে।

থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন পরিদর্শক থংচাই লের্তওলিরাতানাপং বলেন, তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো। মানসিকভাবেও তারা সুস্থ আছে। তবে বেশিরভাগ শিশুরই গড়ে দুই কেজি করে ওজন কমেছে।

এদিকে সাধারণত প্লাবিত হয়ে যাওয়া কোনো গুহার ভেতরে কেউ বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে থাকলে তার হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ব্রিটিশ কেভিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান এন্ডি এভিস বলেন, বিশ্বের ওই এলাকায় গুহার ভেতরে বাতাসের তাপমাত্রা বেশিই হয়ে থাকে। তারপরেও ওই কিশোররা সতর্কতা হিসেবে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল।

থাই কর্মকর্তারা বলেন, নিজেদের উষ্ণ রাখার জন্যে তারা গুহার ভেতরে পাঁচ মিটার গভীর একটি গর্ত খুঁড়েছিল শিশুরা। পাথর দিয়ে এই সুড়ঙ্গটা তৈরি করেছিল তারা। নিজেদের উষ্ণ রাখতে তারা ওই সুড়ঙ্গের ভেতরে আশ্রয় নিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় গুহা উদ্ধার কমিশনের সমন্বয়কারী আনমার মির্জা বলেন, বেশিরভাগ গুহাই প্রাকৃতিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারে। গুহার ভেতরেও বাতাস ঢুকতে ও বের হতে পারে। গুহার যেসব জায়গায় লোকজন যেতে পারে না সেখানে কিন্তু বাতাস প্রবাহিত হয়।

কিন্তু তারপরেও যত দিন গড়িয়েছে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ততটাই কমে গেছে। বলা হচ্ছে, শিশুরা যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা হওয়ার কথা ছিল ২১ শতাংশ। কিন্তু সেটা নেমে গিয়েছিল ১৫ শতাংশে। পরে বাচ্চাদের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছিল ডুবুরিরা।

উল্লেখ্য, থাই নেভির সাবেক একজন ডুবুরি গুহার গভীরে অক্সিজেনের বোতল সরবরাহ করে ফেরার পথে নিজেই অক্সিজেনের অভাবে মারা যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here