গুহায় আটকপড়া ১২ কিশোর ভালো আছে

0
310

খবর ৭১ঃ  থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ ভালো আছে। মঙ্গলবার নৌবাহিনীর প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কিশোরেরা হাসছে। নিজেদের নাম বলছে। দুহাত তুলে ডুবুরি দলের সদস্যদের অভিবাদন দিচ্ছে। নিজেদের পছন্দের খাবারের তালিকার কথা বলছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই কিশোরদের সঙ্গে এখন দুজন ডুবুরি নিয়মিত গুহায় থাকছেন। তাঁরা তাদের ডুব সাঁতার শেখাচ্ছেন। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডুবুরিরা কিশোরদের পানির নিচে যে অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করতে হয়, তার ব্যবহার শেখাতে শুরু করেছেন।

আটকে পড়ার নয় দিনের মাথায় গত সোমবার ওই ফুটবল দলকে খুঁজে পায় থাই নিরাপত্তা বাহিনী। খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা যে বেঁচে আছে—এমনটা তেমন কেউ চিন্তা করেনি। কারণ বন্যার পানিতে ইতিমধ্যেই গুহার আশপাশ টইটম্বুর হয়ে গেছে।

তবে এই ১৩ জনের জীবিত থাকার খবর কিছুটা স্বস্তি দিলেও দুশ্চিন্তার কারণও আছে কয়েক গুণ। কীভাবে তাদের উদ্ধার করা হবে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা ও বিশ্লেষণ। কারণ, যে গুহায় তারা আটকা পড়েছে, সেটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। টানা ভারী বর্ষণ ও বন্যায় সেই ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে না এলে তাদের উদ্ধারে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

যে ফুটবল দলের সদস্যরা গুহায় আটকে পড়েছে, সেটির নাম ওয়াইল্ড বোয়ার। ২৩ জুন কোচসহ ওই ১২ খুদে ফুটবলার দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় বেড়াতে যান। গুহাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। এটি থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহার একটি। এখানে যাত্রাপথের দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংযোগ পথও (করিডর) বেশ সংকীর্ণ। ভারী বর্ষণ আর কাদায় থাম লুয়াংয়ের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা গুহার ভেতরে আটকা পড়ে। ভেতরে বন্যার পানি ঢুকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, করিডরের মোট চারটি জায়গায় পানির পরিমাণ ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার দেশটির সামরিক বাহিনী জানায়, আটক ১৩ জনকে উদ্ধার করার প্রক্রিয়াটি জটিল। থাইল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর দেওয়া বিবৃতির উল্লেখ করে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন আনন্দ সুরাবন বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে চার মাস চলার মতো খাবার পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। গুহার মধ্যে ঢুকে পড়া বন্যার পানি সরানোর চেষ্টার পাশাপাশি ১৩ জনকে ডুবসাঁতার শেখানো হবে।’ এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার উচ্চ ক্যালরির জেল, প্যারাসিটামলসহ অতি প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ তাদের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাক্রন বলেন, তাদের ডুবসাঁতার শেখানোর লক্ষ্য হচ্ছে এভাবে তাদের গুহার বাইরে বের করে আনা। তবে এই পদ্ধতি নিয়ে সংশয় আছে। যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তাহলে এটা হবে খুবই কঠিন কাজ। গুহায় ডুবসাঁতার এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে এই কিশোরদের জন্য, যারা ডুবসাঁতার দিতে পারে না এবং নয় দিন না খেয়ে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানে পথ আটকে গেছে। সুস্থ-সবল ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেভি সিলের সদস্যদেরই এই পথ পাড়ি দিতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় আটকে পড়াদের গুহায় থাকতে হতে পারে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাসও। ডুবুরি রেমেনান্টস বলেন, ডুবসাঁতার দিয়ে বের হয়ে আসতে তাদের যেমন শরীরের জোর লাগবে, তেমনি গুহার ভেতরে দীর্ঘদিন থাকতে মনের জোর লাগবে। তবে আটকে পড়া কিশোর ও তাদের কোচ মানসিকভাবে বেশ ভালো আছে, এটা ভালো লক্ষণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উদ্ধারকাজের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচা। তিনি বলেন, ‘থাইল্যান্ডের সবাইকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ বিদেশিদের। সবাই নায়ক। সবাই পরস্পরকে সহায়তা করছেন।’

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপং পাওচিন্দা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা পাম্প দিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। তবে যদি অনেক বেশি বৃষ্টি হয়, পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। তখন আটকে পড়া কিশোরদের বের করে আনা আরও কঠিন হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here