গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ, সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ২০

0
288

খবর৭১ঃবকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর মহানগরের লক্ষ্মীপুরা এলাকার ইন্টারমেক্স নামের পোশাক কারখানায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় শ্রমিক পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ হলে পুলিশসহ অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গাজীপুর সদর থানার এসআই বশির আহমেদ ও কারখানার কোয়ালিটি কন্ট্রোলার আব্দুল আলিম এবং লাঠিপেটায় আহত কারখানার প্যাকিংম্যান মারফত আলী (২৫), আয়রনম্যান মোবারক হোসেন (৩০) শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের এএসপি মো. মকবুল হোসেন জানান, ইন্টারমেক্স পোশাক কারখানার স্টাফদের পাঁচ মাসের এবং শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতনের দাবিতে গত রোববার দুপুর থেকে কর্মবিতি এবং বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় কারখানার অফিসের কাচ ভাঙচুর করেছে। পরে সন্ধ্যার দিকে তারা ওইদিন কারখানা এলাকা ত্যাগ করে চলে যায়।

তিনি জানান, পরদিন সোমবার সকালেও তারা কারখানায় গিয়ে একই দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে কর্তৃপক্ষ ১৪ অক্টোবর তাদের পাওয়ার দেয়ার ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা না মেনে আবারও বিক্ষোভ করে এবং কারখানায় ভাঙচুর শুরু করে। একপর্যায়ে তারা কারখানা থেকে পাশে ঢাকা-গাজীপুর সড়কে অবস্থান করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের মৃদুলাঠি চার্জ করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয় বলে এএসপি মো. মকবুল হোসেন জানান।

গাজীপুর সদর থানার ওসি সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, এ সময় সদর থানার এসআই বশির আহমদসহ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তবে কেউ গুরুতর নন।

ওই কারখানার কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর মো. আমান উল্লাহ ও শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, কারখানায় স্টাফদের পাঁচ মাসের এবং শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ওই পাওনা পরিশোধের একাধিক তারিখ দিলেও তারা তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও কর্তৃপক্ষ বেতন দেয়নি।

বেতনের আশ্বাসে রোববার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে কাজে যোগ দিলেও বেতন না পেয়ে সেদিন দুপুরে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের ধর্মঘট কর্মসূচি।

তারা জানান, প্রতিবার বেতনের আগে তাদের আন্দোলন করে বেতন নিতে হয়। সোমবারও তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর হামলা ও গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এতে তাদের অন্তত ১৯-২০জন আহত হয়েছেন। তাদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

কারখানার ইলেকট্রিশিয়ান মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কারখানার স্টাফদের যাদের বেতন ১৫-২৫ হাজার তাদের পাঁচ মাস, যাদের বেতন ২৫-৪০ হাজার তাদের বেতন ৬ মাস এবং যাদের বেতন তারও ওপরে তাদের সাত মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। বেতন চাইলে কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তা পরিশোধ করেনি। এতে রবিবার দুপুরের পর থেকে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে স্টাফরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বেতনের জন্য অপেক্ষা করে সন্ধ্যার দিকে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করে চলে গেছে।

এ ব্যাপারে কারখানার জিএম (অপারেশন) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এ কারখনায় ৬ হাজারের মতো শ্রমিক স্টাফ রয়েছে। প্রতি মাসে তাদের বেতনের জন্য সোয়া ৬ কোটি টাকার প্রয়োজন। অর্থ সংকটের কারণে কথামতো আমরা বেতন দিতে পারছি না। তারপরও ২৪ অক্টোবর বেতন প্রদানের আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা না মেনে রোববার দুপুরে বিক্ষোভ শুরু করে এবং অফিস কক্ষের কাচ ভাঙচুর করে। সোমবার সকালেও তারা কারখানা চত্বরে ধর্মঘট, বিক্ষোভ এবং দুপুরে ভাঙচুর শুরু করে।
খবর ৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here