গণহত্যার মামলা ‘অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর’ : সু চি

0
464
গণহত্যার মামলা ‘অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর’ : সু চি

খবর৭১ঃ নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেওয়া দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যে তিনি মিয়ানমারে ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর অভিযানকে জাতিগত নয় বরং সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে অভিযান বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করায় গাম্বিয়ার সমালোচনা করেছেন।

সু চি তার বক্তব্যের শুরুতে আন্তর্জাতিক আইন ও সনদসমূহের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে আদালত সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি ১৯৯০ এর দশকের বলকান যুদ্ধের সময়কার হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন।

গণহত্যা সনদের বিধান রুয়ান্ডা এবং সাবেক ইয়োগোস্লাভিয়ায় প্রয়োগ করা হয়নি বলে দাবি করে গাম্বিয়ার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেন। সু চি বলেন, তার দেশের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলাটি ‘অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর’।

২০১৭ সালে রাখাইনে অন্তত ৩০টি পুলিশ ক্যাম্পে হামলার কারণে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে বলে উল্লেখ করেন। সেনাবাহিনীর অভিযান জাতিগত নয় বরং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বলে দাবি করেন সু চি।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের উপর চাপ প্রয়োগের কথা স্বীকার করে সু চি বলেছেন, পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে তখনকার সংঘাত ছিল জটিল এবং এটা অনুধাবন করা সহজ নয়। তবে তাঁর দেশের সেনা সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা দেশীয় তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। একে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন সু চি।

সু চির দাবি ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুধুমাত্র সন্ত্রাস এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে ব্যবহৃত হয়েছে।

সু চি বলেন, অভিযানের সময় কিছু মানুষ ভয় পেয়ে কক্সবাজারে চলে আসে! তবে সু চি তার বক্তব্যে রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি।

মঙ্গলবার প্রথম দিনের শুনানিতে গাম্বিয়াকে নেতৃত্ব দেন দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। শুনানিতে তামবাদু বলেন, ‘গাম্বিয়া আপনাদের যা বলতে চায় তা হলো, আপনারা মিয়ানমারকে কাণ্ডজ্ঞানহীন হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে বলুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতায় আমরা স্তম্ভিত, এটি আমাদের বিবেককে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমরা চাই তারা নিজ দেশে গণহত্যা বন্ধ করুক।’

শুনানিতে আদালতের নির্দিষ্ট ১৫ জন বিচারকের পাশাপাশি আরও দুজন এডহক বিচারপতি অংশ নিয়েছেন। গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রফেসর ক্লাউস ক্রেস এডহক বিচারপতি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী শুনানির শুরুতেই তাদের দুজন শপথ নেন। তিন দিনের শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর এই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো একে গণহত্যা বলে বর্ণনা করে।

গত মাসে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন’র (ওআইসি) পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যার ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে গাম্বিয়া। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইসিজে আয়োজিত শুনানির প্রথমদিনে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) গাম্বিয়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। ১১ ডিসেম্বর (বুধবার) মিয়ানমার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। ১২ ডিসেম্বর শুনানির শেষ দিনে প্রথমে গাম্বিয়া এবং পরে মিয়ানমার যুক্তিখণ্ডন করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here