খোলা আকাশের নিচে পাঠদান ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর

0
387

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের জয়পুর ইউনিয়নের মরিচপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন ৬ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে স্কুলের বারান্দায়, গাছ তলায় ও খোলা আকাশের নিচে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। হঠাৎ করে বৃষ্টি নেমে গেলে বিদ্যালয়ের একটি মাত্র কক্ষে কোন রকমের আশ্রয় নিচ্ছে বিদ্যালয়ের কোমলমতী শিক্ষার্থীরা। খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছে না। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। ঊর্ধ্বতন মহলে বার বার বিষয়টি জানানো হলেও কোন সুরাহা হয়নি। জেলার মরিচপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের ছোট বড় তিনটি ভবনের মধ্যে ২টি ভবন ৭ বছর আগে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বাকি একটি ২ রুম বিশিষ্ট ভবনে একটি কক্ষে অফিস রুম এবং একটি কক্ষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য। আর এই একটি রুমের বিপরীতে এখানে ৬টি শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক। অবিভাবক লিটু সরদার জানান, তাদের সন্তানকে এই বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে তারা অনেক আতংকে থাকে। আকাশে মেঘ হলেই ক্লাস বন্ধ থাকে। এতে তার সন্তানের মত অন্য ছেলেমেয়েদেরও লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরণ্য, হাফসা , সেতু জানান, আমরা রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ক্লাস করতে পারি না। আশেপাশের শব্দের কারণে পড়াশোনায় মন বসে না। বিদ্যালয়ে ভবন না থাকায় খোলা জায়গায় পড়ালেখা করতে হচ্ছে। যে কোন সময় গাছের ডালপালা ভেঙ্গে এবং ঝড়-বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। হঠাৎ বৃষ্টি হলে বই খাতা ভিজে যায়। ক্লাস করতে এসে বৃষ্টিতে ভিজে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। অবিভাবক মো. মিলু জানান, আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় হয়। খোলা আকাশে, গাছের নিচে ক্লাস হয় ঝড়-বৃষ্টির সময় কখন গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে তারা আহত হতে পারে। এভাবে ক্লাস করা ছেলে মেয়েদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের দাবি করেন তার মত অন্যন্য অভিভাবকেরাও। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল আমিন জানান, ‘সামনে পরীক্ষা এ অবস্থায় খুব দুশ্চিন্তায় আছি। অভিভাবক মনোয়ারা বেগম, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, নাতি-পোতারা বৃষ্টির জন্য স্কুলে আসে না। বাড়িতে প্রাইভেট দিয়েছি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় খোলা জায়গায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা না থাকায় এবং দূর্ঘটনার আশংকায় স্কুলে শিক্ষার্থী আসা কমে যাচ্ছে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবিনা আক্তার সাথী, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের ২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর কোন ভবন তৈরী না করে গত বছর ২টি ভবনই নিলাম করা হয়েছে। বর্তমানে ছেলেমেয়েদের জন্য একটি মাত্র রুম আছে। গত বছর এই বিদ্যালয় থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে যার মধ্যে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে ১৪ জন। ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের যাতে লেখাপড়ার ক্ষতি না হয় সেজন্য বারান্দায়, খোলাস্থানে এবং টিনের ছাপড়ায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করেন তিনি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাতি মান্নান সরদার, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, বারবার উপর মহলে জানানো হলেও বিষয়টির কোন সুরাহা হয়নি। আমরা গ্রামবাসী চেষ্টা করে একটি টিন সেডের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। দ্রুত ভবন নির্মাণ না হলে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শাহ আলম, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, জেলায় এ ধরনের বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাঠদান অব্যাহত রাখতে আপাতত টিনসেড নির্মাণের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য উপর মহলে তালিকা পাঠানো হয়েছে। ভবনের বরাদ্দ পেলে সমস্যা থাকবেনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here