খোঁজ মেলেনি আইনজীবী রথীশের, বাড়ির পাশে ডোবায় রক্তমাখা শার্ট

0
454

খবর ৭১:জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক (বাবু সোনা) নিখোঁজ। ওই ঘটনায় পরিবারের উদ্যোগে মঙ্গলবার দিনভর বাড়ির পাশে একটি ডোবায় তল্লাশি চালানো হয়। সেখানে একটি রক্তমাখা শার্ট পাওয়া গেছে।

ওই শার্ট পাওয়ার ঘটনায় বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে বলে পুলিশের ধারণা। শার্টটি এখন পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। নতুন করে পুলিশ আরও দুজনকে অটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ নিয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন ছয়জন।

নগরীতে গণঅনশন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। আইনজীবীরা এক সমাবেশ থেকে রথীশকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়। অন্যথায় আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়। মঙ্গলবার নিখোঁজ আইনজীবীর সন্ধানে পরিবারের পক্ষ থেকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবুপাড়ায় নিজ বাড়ির পেছনে একটি ডোবায় তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় পুলিশ-র‌্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ডোবায় তল্লাশি চালানোর সময় সেখানে একটি রক্তমাখা শার্ট পাওয়া যায়। ওই শার্ট পাওয়ার পর পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম নতুন মাত্রায় ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে। ওই রক্তমাখা শার্টের মধ্যে নিখোঁজ আইজীবীর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে তারা কোনো সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। শার্টটি এখন মাহিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক শাহ আলমের হেফাজতে রয়েছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর পুলিশের এএসপি (সার্কেল-১) সাইফুর রহমান সাইফ বলেন, ডোবায় তল্লাশির সময় যে শার্টটি পাওয়া গেছে সেখানে রক্তের মতো দাগ রয়েছে। কাদাপানিতে দাগটি ঠিক স্পষ্ট নয়। তাই শার্টের ‘ফরেনসিক’ পরীক্ষার পর বোঝা যাবে শার্টটি কার এবং ওই দাগ রক্তের কি না।

তিনি আরও জানান, ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহে তাজহাট উচ্চবিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষককে মঙ্গলবার আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নিখোঁজ ঘটনায় কোনো ক্লু পাওয়া যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাটির তদন্তে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক দল। তবে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে বলেও ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান। নতুন করে আটককৃতরা হলেন তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মতিয়ার রহমান ও কামরুল ইসলাম। আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

আটককৃতরা হলেন, তার সহকর্মী ও পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ। এর মধ্যে কামরুল ইসলামের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ ছিল এবং এ নিয়ে প্রায় মারধরের ঘটনাও ঘটত বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাই পুলিশের সন্দের তীর এখন তার দিকে।

রক্তমাখা শার্ট সম্পর্কে রথীশ চন্দ্রের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল বলেন, যে শার্টটি ডোবায় পাওয়া গেছে তাতে রক্ত সাদৃশ্য দাগ দেখা গেলেও শার্টটি তার নিখোঁজ দাদা রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের নয়।

পুলিশের একজন দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিবার থেকে পরিষ্কার কোনো তথ্য না পাওয়ায় তদন্ত নিয়ে দ্বিধান্বিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। কারণ রথীশ চন্দ্র নিখোঁজের ঘটনায় পরিবার থেকে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়া হচ্ছে না। বাড়ির লোকজন নানা বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদের পারিবারিক মর্যাদা, রাজনৈতিক কারণ ও ধর্মীয়ভাবে বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই পুলিশ তার পরিবারের লোকজনকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করছে না। তিনি বাড়ি থেকে যে মোটরসাইকেলে পরিচিত জনের সঙ্গে চলে গেছেন এমন কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। পরিবারের দাবি, তিনি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন আর তার মোবাইল ফোন ৭টার পর বন্ধ হয়।

পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে মোবাইল ফোন-সংক্রান্ত যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যায় ভোর পাঁচটার পর থেকে তার মোবাইলের সুইচ বন্ধ ছিল। ফলে সঠিক তথ্য নিয়েও বিভ্রান্তিতে পড়েছে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা।

পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। এ বিষয়টি রংপুর পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

সোমবার থেকে থানায় আটককৃতরা হলেন ডিমলা কানন গোটলার আলম শেখের ছেলে দেলোয়ার হোসেন, হায়দার আলীর ছেলে রফিক মিয়া, ছালাম মিয়ার ছেলে জিয়ারুল মিয়া ও আজহারুল মিয়ার ছেলে বাহারুল মিয়া। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোঁজ ঘটনার কোনো রহস্যের হদিস পাননি বলে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. বাবুল মিয়া জানান। তিনি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।
আইনজীবী রথীশ চন্দ্রে ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক এ ঘটনায় বাদী হয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলার সূত্র ধরে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব, পিবিআই, সিআইডি, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ সব গোয়েন্দা সংস্থা। তবে এখন এ ঘটনায় নির্দিষ্ট করে কোন পথে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত করবে, তা নিয়েও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিপাকে পড়েছে। আইনজীবী নিখোঁজের ঘটনায় মঙ্গলবার আদালতপাড়ায় আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়। সমাবেশ থেকে আইনজীবীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে উদ্ধারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, আমরা সব তথ্য সংগ্রহ করার কাজ করছি। এখনই বলার মতো কোনো তথ্য হাতে নেই। সময় হলে সব জানা যাবে। আমরা প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য এবং নিখোঁজ আইনজীবীকে অক্ষত উদ্ধারের জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, রথীশ চন্দ্র ভৌমিক (বাবু সোনা) রংপুরে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী আলোচিত হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার সাক্ষী ছিলেন। ওই মামলা ৩টির আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here