খুলনা-৬ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আ’লীগ-বিএনপি’র তরুণ প্রার্থীরাই প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে

0
406

পাইকগাছা(খুলনা)ঃ
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সহ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি,জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলটির মধ্যে গত যে কোন সময়ের চেয়ে এবার তরুণ প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নে প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও। এমনকি বর্তমান এমপি এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হকের বড় ছেলে শেখ মনিরুল হকও পিতার পাশাপাশি প্রচার প্রচারণায় ইতোমধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। তবে বিষয়টিকে কেউ কেউ ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। অনেকের ধারণা,এবার নানা বিতর্কে নূরুল হকের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় মনিরুল কে ডামি প্রার্থী হিসেবে আগে-ভাগেই প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। যদিও এর আগে ১৯৯৬,২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। তবে স্ব পরিচিতিতে যে সকল প্রার্থীদের ভোটাররাও এই মূহুর্তে এগিয়ে রাখছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু,কেন্দ্রীয় আ’লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইন্জিনিয়ার প্রেম কুমার মন্ডল। ইতোমধ্যে তারা নির্বাচনি প্রচারণায় এলাকায় রীতিমত একেকজন পরিচিত মুখ। এছাড়া দলটির বর্ষীয়ানদের কাতারে রয়েছেন,বর্তমান সাংসদ আলহাজ্জ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক,সাবেক সাংসদ এ্যাডঃ মোঃ সোহরাব আলী সানা,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পাইকগাছা উপজেলা আ’লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচীব মোঃ রশীদুজ্জামান মোড়ল। অন্যদিকে বিএনপি’র সিনিয়র নেতা এ্যাডঃ মোমরেজুল ইসলাম,ডাঃ আঃ মজিদের পাশাপাশি তরণ প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন চাইবেন,কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম রফিক,খুলনা জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু,এছাড়া জাতীয় পার্টির একক সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী ময়দানে রয়েছেন,জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য,জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পাইকগাছা উপজেলা জাপা’র আহবায়ক মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর। ২০১৪ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলেও মোর্চার স্বার্থে দলের নির্দেশে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থী হিসাবে উপজেলা সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সানা মহিম এর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার প্রচারণায় বিএনপির চেয়ে আ’লীগ এগিয়ে রয়েছে।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায়,সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় গিয়ে নিজেদের প্রার্থীতার পক্ষে ভোটারদের মধ্যে মধ্যে নিজেদের মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়,প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করার পাশাপাশি চেষ্টা করছেন জনমত যাচাইয়ের। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে নিজেদের জানান দিতে গোটা নির্বাচনী এলাকায় আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বিভিন্ন চিহ্নিত স্পটে প্যানা ও ফেস্টুন সেটে দিয়েছেন। কর্মী-সমর্থকরাও নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নিজের ছবি সহ প্যানা দিচ্ছেন।
তবে ভোটের আগে মাঠের লড়াই অর্থাৎ মনোনয়ন দৌড়ে দলীয় সিদ্ধান্তকেই স্বাগত জানিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করে যাবেন বলে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীদের পাশাপাশি ঘোষণা দিয়েছেন,সিনিয়ররাও। সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হলে এবং বিএনপি মোর্চা নির্বাচনে এলে লড়াই হবে বিএনপির সাথে আ’লীগের। আসনটিতে বিএনপি’র নেতৃত¦াধীন মোর্চায় জনপ্রীয়তায় এখ নপর্যন্ত জামায়াতের অবস্থান ভাল। তাই মোর্চার স্বার্থে বরাবরের মত এবারও বিএনপি জামায়াত ইসলামীকে আসনটি ছাড় দিতে পারে। আর তা হলে এখন পর্যন্ত জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে আবুল কালাম আজাদের পাল্লাই ভারী বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী এখন পর্যন্ত কোন বিশেষ নির্বাচনী প্রচারণা নাচালালেও অবস্থান ও জনসমর্থনে জামায়াতের বর্তমান অবস্থান গত যেকোন সময়ের চেয়ে শক্ত বলে মনে করছেন দলটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনী এলাকার ২টি উপজেলার কয়রার ৭টি ও পাইকগাছার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে খুলনা-৬ আসন গঠিত। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাদে প্রায় প্রত্যেকটি নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রবীণ রাজনীতিকরাই এখ নপর্যন্ত মনোনয়ন পেয়ে আসছেন। একমাত্র ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুলনা-৬ আসন থেকে তরুণ উদীয়মান প্রার্থী হিসেবে বর্তমান পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডঃ স.ম বাবর আলীকে দলীয় মনোনয়ন দেন। তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের সর্বকণিষ্ঠ সংসদ সদস্য ছিলেন স ম বাবর আলী। এরপর থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে আসনটি থেকে বিভিন্ন দলের প্রবীণরাই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসছেন।
নির্বাচনে আ’লীগের তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মন্ডল জানান,যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আসনটি থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন তিনি। সে লক্ষ্যে কয়েক বছর আগে থেকে কাজ কওে যাচ্ছেন। তবে কোন কারণে মনোনয়ন বি ত হলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন তিনি। অপর তরুণ প্রার্থী আ’লীগের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আক্তারুজ্জামান বাবু দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিতে তার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে দীর্ঘ দিন ধরে পাইকগাছা-কয়রার মানুষের সাথে মিশে একসাথে কাজ কওে যাচ্ছেন বলে জানান। অন্যদিকে অপর দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হকের ছেলে শেখ মনিরুল ইসলামও দীর্ঘদিন পিতার পাশাপাশি থেকে সাংগঠনিক ও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। তিনিও প ম বারের মত দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে এখন পর্যন্ত খুলনা-৬ আসনে অন্যান্য দলগুলির চেয়ে ক্ষমতাসীনরাই প্রচার-প্রচারণায় নিজেদেও এগিয়ে রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দরের জন্য আসনটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ,জামায়াত ইসলামীর পরে সাংগঠনিক ও সমর্থনের দিক থেকে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে। ঠিক এমন অবস্থায় আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোটগত অবস্থান ঠিক থাকলে এবং প্রার্থী মনোনয়নে তরুণদেও প্রাধান্য দিলে তা ভোটারদেও মধ্যে ঠিক কি ধরনের প্রভাব ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here