খুলনা সিটি নির্বাচন বিএনপির প্রত্যাখ্যান

0
282

খবর৭১: জালভোট ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

বুধবার (১৬ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

এসময় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেন। সেইসাথে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত মুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবিও জানান তিনি।

এসময় রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও কোনোরুপ ক্ষতি হলে সরকার রেহাই পাবেনা।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার আত্মীয়স্বজন গত পরশু দিন দেখা করেছেন। তারা দেশনেত্রীর অসুস্থতা দেখে বেদনাহত হয়েছেন। দেশনেত্রীর শারীরিক অসুস্থতা ক্রমাগত অবনতিশীল। ইতোপূর্বে তার হাঁটুতে অস্ত্রপচার থাকার কারণে কারাগারে বিনা চিকিৎসায় হাঁটুর ব্যাথা এখন আরও তীব্র হয়েছে। বাম হাতের ব্যাথায় তিনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের কারণে হাত-পা নড়াতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ইতোপূর্বে তার চোখে অস্ত্রোপচার হওয়ায় এখন চিকিৎসার অভাবে চোখ সবসময় লাল থাকছে। সরকারের নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাকে দেয়া হয়নি অর্থপেডিক বেড, করা হয়নি নিয়মিত ফিজিওথেরাপীর ব্যবস্থা এবং উন্নত মানের এমআরআই দিয়ে পরীক্ষা করা।

রিজভী বলেন, প্রায় দিনই খালেদা জিয়া প্রতিরাতে জ্বরে ভুগছেন। বারবার দাবি জানানোর পরও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে দেশনেত্রীর চিকিৎসা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তাকে বন্দি করে তার জীবনযাপন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর দীর্ঘদিনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করছেন শেখ হাসিনা। সরকারের উদ্দেশ্য অশুভ, অমানবিক ও ব্যক্তির মানবাধিকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা। মূলত, চিকিৎসা দিতে অগ্রাহ্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় বেগম জিয়া সরকার প্রধানের হিংসার সম্মুখীন। চিকিৎসা নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উদাসীনতা ও উপেক্ষায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনোরুপ ক্ষতি হলে সরকার কোনোভাবেই রেহাই পাবে না।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, গতকাল খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক নজীরবিহীন ভোট ডাকাতির দক্ষ যজ্ঞ জনগণ প্রত্যক্ষ করলো। গতকাল খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ধানের শীষের ভোটার ও সমর্থকরা যেভাবে নিগৃহীত হয়েছেন তা কোনো সুস্থ নির্বাচন পদ্ধতি হতে পারে না। গতকাল ভোটের দিন নৌকার প্রার্থীর লোকজনদের ছিল সীমাহীন আধিপত্য ও বেপরোয়া চলাফেরা। গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা লাইন ধরে বিভিন্ন কেন্দ্রে জালভোট প্রদান করে। অনেক কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসাররা আওয়ামী ঝটিকা বাহিনীকে একচেটিয়া ‘ভোট কাস্টিং’ এ সহায়তা করে। তারা কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যালট পেপারের বান্ডিলে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে। কোথাও কোথাও অবশ্য আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের বল প্রয়োগ করে বের করে দেয় এবং কোথাও কোথাও মারধরও করে। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে।

রিজভী বলেন, গতকাল ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার লজ্জায় গণমাধ্যমের সামনে না আসলেও ইসি সচিব গণমাধ্যমকে বলেছেন-খুলনা চমৎকার ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। উনি ঠিকই বলেছেন উল্লিখিত ভোটের পরিবেশই হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা মার্কা’ নির্বাচন। যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া ছেলে একই সঙ্গে বাবার সাথে ভোট দিতে পারে। কেন্দ্রে যাবার আগেই ভোটারদের ভোট দেয়া হয়ে যায়। পুলিশের সহায়তায় ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির উৎসব চলে, ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ব্যালট পেপার আগেই শেষ হয়ে যায়। কেন্দ্র দখল করে আধা ঘন্টায় ১২০০ ভোট দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ভোট কেন্দ্রের বাইরে মুখোশধারীরা বাছাই করে করে কেন্দ্রে ঢুকিয়ে ভোট নেয়া হয়, কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে জালভোটের উৎসব চলে সেরকম নির্বাচনকে তো চমৎকার বলবেনই নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৬৫ শতাংশের ওপরে। মূলত, সেখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩০ শতাংশেরও কম। সন্ত্রাসীদের বাধা ও সন্ত্রাসী হামলার মুখে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের অধিকাংশকেই কেন্দ্র থেকে ভোট দিতে না পেরে ফিরে যেতে হয়েছে। ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা নেই, সামর্থ নেই আর যোগ্যতাও নেই।

রিজভী বলেন, ভোট ডাকাতি, ভোট সন্ত্রাস, জাল ভোট, ভোট কেন্দ্র দখল, অবৈধ অস্ত্রের আস্ফালন ছাড়া আওয়ামী লীগের বিজয়নিশানে হাওয়া লাগে না। গতকালের ভোট নিরস্ত্র ভোটারদের ওপর অবৈধ সরকারের অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শন। আমি দলের পক্ষ থেকে গতকালের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করছি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম -মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here