খালেদা জিয়ার ডিভিশন না পাওয়া ‘অমানবিক’

0
351

খবর৭১: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত কোনও ডিভিশন দেয়া হয়নি অভিযোগ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘৭৩ বছর বয়সী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারান্তরীণ রেখে ও তাকে ডিভিশন না দিয়ে সরকার তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ অমানবিক আচরণ করছে।’

এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শুনলে আপনারা বিস্মিত হবেন, ব্যথিত হবে সমগ্র জাতি। সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর এখন পর্যন্ত দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কোনও ডিভিশন দেয়া হয়নি। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি তো ৭৩ বছরের একজন বয়স্ক মানুষ। তার সার্বক্ষণিক পরিচারিকা হিসেবে যিনি জেল কোডের মধ্যে রয়েছে তাকেও বেগম জিয়ার সঙ্গে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। এর চেয়ে অমানবিক আর কিছু হতে পারে না।’

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘জেল কোডের মধ্যে খুব পরিষ্কার করে বলা আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রীর ক্ষেত্রে ডিভিশন দিতে কোনও অনুমতির দরকার নেই। অর্থাৎ জেল কোডেই বলা হচ্ছে তারা ডিভিশন পাবেন। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখনও ডিভিশন পাচ্ছেন না। আমরা অবিলম্বে তাকে ডিভিশন দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় সকল সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এর জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে- নিয়ম এবং জেল কোড ভঙ্গ করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে নিশ্চয়ই শুনেছেন আমাদের আজকে ৫ জন সিনিয়র আইনজীবী, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অন্যান্য যারা ছিলেন তারা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এসময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান সেখানে ছিলেন।’

বৈঠক প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৈঠকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় এই অনৈতিক অবৈধ সরকার তাদের একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করাতে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে মিথ্যা মামলায় তাকে পাঁচ বছরের যে সাজা দিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরে এবং সারাদেশে এই অনৈতিক অবৈধ সরকার অত্যাচার নিপীড়নের যে স্ট্রিম রোলার চালিয়েছে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করেছে তারও তীব্র নিন্দা জানানো হয়।’

বিএনপি মহাসচিব জানান, ‘আজকের বৈঠকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যিনি এখন লন্ডন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান সাহেব তার বক্তব্য টেলিফোনের মাধ্যমে জানিয়েছেন। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’

মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমাদের আজকের এই সভায় এখনেও আলোচনা চলছে। বেশিরভাগের পক্ষ থেকে যে বিষয়টি উঠে আসছে তা হলো দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে সমগ্র দেশ আজ ধিক্কার দিচ্ছে। প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমরা দেশবাসীকে সে জন্য ধন্যবাদ জানাই। দলের যে সমস্ত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এবং সকল নেতাকর্মী যারা বাধা-নিষেধ-নির্যাতন উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’

বৈঠকে বিএনপির বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, লে.জে (অব:) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদু, ব্যারিস্টার শাহজান ওমর (বীর উত্তম), নিতাই রায় চৌধুরী, আহমদ আযম খান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফরহাদ হালিম ডোনার, এম এ কাইয়ুম, আবদুল হাই শিকদার, ড. সুকোল বড়ুয়া, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুনুর রশিদ, খায়রুল কবির খোকন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ উপস্থিত আছেন।

এর আগে শনিবার (১০ ফেব্রয়ারি) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় গুলশানে বেগম জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুরু হওয়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকটিতে বিএনপির প্রায় সব শীর্ষ নেতা অংশ নেন।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ‍তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। কর্মসূচির মধ্যে আগামী সোমবার সারা দেশে একযোগে মানববন্ধন, মঙ্গলবার অবস্থান ধর্মঘট ও শেষ দিন বুধবার সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দেশব্যাপী অনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ স্ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ০৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই কড়া নিরাপত্তায় খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here