‘খালেদা জিয়ার এখন আর মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়’

0
649

খবর ৭১: কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এখন আর মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, এখন খালেদা জিয়াকে কারাভোগ করতে হবে।

সোমবার সকালে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগের আদেশের পর নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

মাহবুবে আলম বলেন, আদালত লিভ টু আপিলের (আপিলের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির জন্য ২২ মে ধার্য করেছিলেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়ে এনে ৮ মে নির্ধারণ করেছেন। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার এখন আর মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাকে কারাভোগ করতে হবে।’

আদেশকে নজিরবিহীন উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা—এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয়ই খুব একটি ভালো উচ্চারণ নয়। জিনিসটাকে রাজনীতিকীকরণের জন্য তারা চেষ্টা করছেন। এখানে খালেদা জিয়াকে সব রকম সুবিধা দিয়ে আদালত এ দণ্ড প্রদান করেছেন। দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত যে কতখানি মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, ন্যায়নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন, সেটি প্রমাণ পায় তার সামাজিক মর্যাদা ও বয়স বিবেচনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। যদিও অন্যদের ১০ বছর দিয়েছেন। কাজেই এটাকে নিয়ে যারা রাজনীতি করতে চাইছেন, তারা নিশ্চয়ই সফল হবেন না। কারণ এখানে কোনো রাজনীতির বিষয় না। এটা সাধারণ অপরাধের বিষয়।’

এর আগে আজ সকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এ দিন আপিল বিভাগ জামিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা লিভ টু আপিল গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই দিন কার্যতালিকায় জামিন স্থগিতের বিষয়ে শুনানি অগ্রাধিকারে থাকবে।

এর আগে গতকাল রোববার জামিন স্থগিতের বিষয়ে শুনানি শেষ করে আপিল বিভাগ আজ এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য রেখেছিল।

রায়ের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এটি নজিরবিহীন রায়। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে।

গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে পরের দিন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আবেদন করে। পরে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ গতকাল রোববার পর্যন্ত জামিনের স্থগিতাদেশ দেন। পরদিন ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেন।

জামিনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য ওই দিন বিকেলেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ওই আবেদনের শুনানিও আপিল বিভাগে করা হবে মর্মে আদেশ দেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং আসামিদের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।

২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here