খাগাউড়ায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত গ্রেফতার ২

0
484

মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বাহুবলের খাগাউড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দুপক্ষের সংঘর্ষে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি এক ব্যক্তি নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার উত্তর সীমান্তবর্তী খাগাউড়া (রইছগঞ্জ) বাজারে। আহতদের হবিগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত যুবকের নাম জুনায়েদ মিয়া (৩৮)। তিনি বাহুবল উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের আব্দুল আউয়াল ওরপে উচা মিয়ার পুত্র।পেছন ফিরে দেখে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নের উত্তর সীমান্তবর্তী খাগাউড়া এলাকায় কয়েকটি সরকারি বিল ও জলাশয় দীর্ঘদিন ধরে খাগাউড়া ও কালাপুর গ্রামবাসী ভোগদখল করে আসছে। উক্ত বিলের আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শাহ শওকত মিয়া ও আব্দুর রহিম (মেম্বার)-এর মাঝে বিরোধ চলে আসছে। উক্ত বিরোধের বিষয়টি আব্দুর রহিম মেম্বারের পক্ষের লোকজন বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার জসীম উদ্দিনকে অবগত করেন। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাগাউড়া গ্রামের স্কুল মাঠে একটি বৈঠক ডাকেন। গত ১১ জুলাই বিকেলে এ ব্যাপারে একটি বৈঠক খাগাউড়া স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই, স্নানঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলমসহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বৈঠকে শাহ শওকত মিয়া ও তার পক্ষের লোকজন উপস্থিত হয়নি। উক্ত বৈঠকে আব্দুর রহিমের পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফা অভিযোগ তোলে ধরেন। বৈঠকের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার “উপজেলা প্রশাসন বাহুবল” নামক ফেসবুক ফেইজে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে শাহ শওকত গংদের কর্মকান্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেন।১২ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার জসীম উদ্দিন এক নোটিশের মাধ্যমে শওকত আলীসহ ১১ জনকে ১৭ জুলাই তার কার্যালয়ে শুনানীতে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের জবাব দিতে নির্দেশ দেন। ১৬ জুলাই শাহ শওকত মিয়া গং সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহূত শুনানী আর অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তীতে আব্দুর রহিম মেম্বারের লোকজনের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ মাজু মিয়া হাইকোর্ট বিভাগে অপর একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।এ প্রেক্ষিতে খাগাউড়া গ্রামের বিবদমান পক্ষগুলোতে উত্তেজনা বেড়ে যায়। আব্দুর রহিম মেম্বারের পক্ষীয় খাগাউড়া গ্রামের মৃত এখলাছ মিয়ার পুত্র জুনায়েদ আহমদ বাদী হয়ে শাহ শওকত গংদের বিরুদ্ধে বাহুবল মডেল থানায় বিল-জলাশয়ের এক কোটি সাড়ে ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে মামলা ও কয়েকটি জিডি দায়ের করেন। উক্ত আত্মসাতের মামলায় শাহ শওকত মিয়া গং আদালতে জামিন চাইতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন। তারা জেলা থাকাবস্থায় আব্দুর রহিম মেম্বারের লোকজন বাহুবল মডেল থানায় শাহ শওকত গংদের বিরুদ্ধে অপর একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলাগুলোতে জামিন লাভ করার মাধ্যমে শাহ শওকত গং গত ১৯ আগস্ট জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। এ প্রেক্ষিতে গ্রামে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশ প্রশাসন এ অবস্থায় গ্রামটির বিবদমান পক্ষদ্বয়কে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়।গত ২৪ আগস্ট বিকেলে আব্দুর রহিম মেম্বারের পক্ষের আব্দুল আউয়াল ওরপে উচা মিয়ার বাড়িতে এক বৈঠকে মিলিত হয় রহিম মেম্বারসহ তাদের পক্ষীয় লোকজন। প্রতিপক্ষের লোকজনের কাছে খবর পৌঁছে হামলা-সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিতে উক্ত বৈঠকটি বসেছে। এ খবরে শাহ শওকত মিয়ার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আগে-ভাগেই খাগাউড়া (রইছগঞ্জ) বাজারে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খাগাউড়া গ্রামের আব্দুল আউয়াল ওরপে উচা মিয়ার পুত্র ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি জুনায়েদ মিয়াকে (৩৮) পেয়ে শওকত মিয়ার পক্ষের লোকজন হামলা চালায়। এ হামলায় জুনায়েদ মিয়া (৩৮) ও একই গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র ফয়সল মিয়া (১৮) গুরুতর আহত হয়। আহতদের মাঝে জুনায়েদ মিয়াকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অপর আহত ফয়সল মিয়াকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরপরই উভয়পক্ষের লোকজন স্থানীয় খাগাউড়া বাজারে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে উভয়পক্ষে আরো তদন্ত ২০ জন আহত হয়। বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী ও বাহুবল মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করে।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর জানান, এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। শাহ শওকত আলীর ভাই শামছুল ইসলাম ওরপে কাচা মিয়া এবং নূরাজ মিয়ার পুত্র রায়হান মিয়াকে আটক করা হয়েছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here