ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মাদারীপুর, নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় নাগরিক সমাজের চোরাগুপ্তা হামলার টার্গেট জনপ্রতিনিধি

0
303

এস. এম. রাসেল, মাদারীপুরঃ
মাদারীপুরে চোরাগুপ্ত হামলা শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে এ চোরাগুপ্ত হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মাদারীপুর অ ল। এ হামলার নেপথ্যে কারা জড়িত বা কারা কি কারনে এ সব ঘটাচ্ছে তার রহস্য এখনো স্পষ্ট নয় প্রশাসনের কাছে। এ চোরাগুপ্ত হামলায় দেখা যায় জনপ্রতিনিধিরা টার্গেট। গেলো দুই সপ্তাহে চোরাগুপ্ত হামলায় মারাত্মক জখম হয়েছে দুই জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীলীগের মাদারীপুর জেলার প্রভাবশালী নেতা। মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার এবং কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এজাজুর রহমান আকনের উপর হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারেই জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীলীগের নেতাদের উপর হামলায় ভীত-সন্ত্রস্ত, ক্ষোভ ও নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে জেলার সুশীল সমাজ। এক্ষেত্রে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর আরো কঠোর নিরাপত্তার জোরদারের দাবী নেতাদের।
হাসপাতাল, পারিবারিক ও পুলিশ সূত্র জানাগেছে, গেল ১৪ জুলাই শনিবার আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা একটি মাইক্রোবাস ও দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে প্রথমে কালকিনি পৌরসভার মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারের বাড়ির পেছনের পকেট গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর মেয়রের শোয়ার ঘরের জানালার গ্রীল ভেঙ্গে রামদা দিয়ে ঘুমন্ত মেয়রের মাথার উপর আঘাত করে। পরে প্রাণ বাঁচাতে মেয়র তার বিছানায় থাকা শর্টগান দিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে দুর্বৃত্তরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে মেয়রকে উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কুমার দেব ও কালকিনি থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীরা জানান, পৌর মেয়রকে হত্যা চেষ্টার ঘটনার প্রতিবাদে ১৫ জুলাই রবিবার সকালে কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা এবং টায়ার জ্বালিয়ে প্রায় এক ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে। এরপর থেকে এখনোও প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ সমাবেশ করছে মেয়রের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে কালকিনি উপজেলা জুড়ে। ঘটনায় সহেন্দভাজন পাঁচজনকে আসামী করে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা করেছে পৌর মেয়র এনায়েত হোসেন। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা আরো জানান, ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরপরই মাদারীপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কালিকাপুর ইউপি চেয়ারম্যান এজাজুর রহমান আকনকে হাতুড়িপেটা করে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পরবর্তীতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় তাকে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ১৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার বিকেলে চেয়ারম্যান বাড়ি কালিকাপুর বাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গেল দুই সপ্তাহে এমন চা ল্যকর দুটি ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মাদারীপুর জেলার রাজনৈতিক পরিবেশ। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার, নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা নিয়েই হিসাব-নিকাশ করছে সাধারণ মানুষ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন এই আলোচনাই হচ্ছে। তবে নেতা-কর্মীরা সাবধানেই পা ফেলছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুর্বৃত্তরা নাশকতা করতে পারে বলেও দাবী নেতা-কর্মীদের।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা জানান, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। তাই এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দুর্বৃত্তরা চোরাগুপ্ত হামলা করে আওয়ামীলীগের নিবেদিত শক্তিকে আক্রমন করছে। এই শান্ত মাদারীপুর জেলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা নেতা-কর্মীদের সচেতন করেছি, যেন রাতের আধারে এক চলাফেরা না করে। আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করবো, যেন এসব গোপনে হামলা বন্ধে রাতে টহলের ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এছাড়াও যদি অন্তঃদলীয় কোন্দলে এসব হামলা হয়ে থাকে, সেগুলোও নির্ধারণ করে সমঝোতা করা হবে। যেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে অন্য দল আমাদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা নিতে না পারে।’
রাতের আধারে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় উদ্বেধ জানিয়ে মাদারীপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি সাহানা নাসরিন রুবি জানান, ‘রাতে মানুষ তার গৃহে নিরাপদে থাকার কথা, সেখানে চোরাগুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে বিচ্ছিন্ন কতিপয় সন্ত্রাসীরা। এটা আমাদের জন্যে খুবই হুমকির। আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যতের টহল ব্যবস্থা জোরদার করলে এমনটা আর সম্ভব নয়। পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের অনুরোধ করবো যেন নাগরিকদের সেবায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে।’
এমন পরিস্থিতিতে আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপের কথা জানিয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) উত্তম প্রসাদ পাঠক জানান, চোরাগুপ্ত হামলা কিনা তা সম্পূর্ণ স্পস্ট নয়।‘দু-একটি বিচ্ছিন্না ঘটনা ছাড়া মাদারীপুর জেলায় আইন-শৃংঙ্খলা মোটামুটি ভালো। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা যাদের বিরদ্ধে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাইসহ বড় বড় অপরাধের মামলা ও সর্বহারা পার্টির সদস্য রয়েছে। তাদের একটি লিস্ট তৈরি করেছে। তারা যদি জামিনে বাহিরেও থাকে, তাহলে তাদের বর্তমান অবস্থান নির্নয় করার চেষ্টা করছি। যাতে নাগরিকদের অন্যতম অধিকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠভাবে ভোট দিতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। এছাড়া রাতে পুলিশের স্পেশাল ফোঁসের মাধ্যমে নৌপথের সাথে যোগাযোগ করার রুটে পুলিশ মোতায়ন রাখা হয়। যাতে কেউ অপ্রীতিকর কিছু করে চলে যেতে না পারে। জেলা পুলিশ সর্ব সময় এর্লাট রয়েছে।’
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দুই মাসে মাদারীপুর সদর থানায় সংঘর্ষ, মাদক, চুরি-ডাকাতিসহ ৬০টি, রাজৈর থানায় হত্যা, ডাকাতি, সংঘর্ষ, মাদকসহ ৫৬টি মামলা, শিবচর থানায় ছিনতাই, হত্যাচেষ্টা, মাদকসহ ৪৮টি মামলা, কালকিনি থানায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, চুরি, মাদকসহ প্রায় ৫২টি মামলা ও ডাসার থানায় অপহারণ, হত্যাচেষ্টা, সংঘর্ষসহ ৪০টি মালা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় সহ¯্রাধিক লোককে আসামী করা হয়। এর মধ্যে মাদক ও অন্যান্য মামলার প্রায় শতাধিক আসামী গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের গ্রেফতার করে আইনের সম্মূখিনের দাবী মাদারীপুরবাসীর।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here