কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন নিয়ে বিব্রত সরকার!

0
633

খবর৭১:সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল বা সংস্কার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা অথবা না করা নিয়ে বিব্রত সরকার। প্রথম দিকে কোটাবিরোধী আন্দোলন সরকার গুরুত্ব সহকারে না দেখলেও পরে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। সরকারের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকার বিব্রত। কারণ সরকার চায় না কোটা প্রথা বিলুপ্ত হোক।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল, এটি তাদের সুবিধার্থেই করা হয়েছে। এজন্য আন্দোলন চলাকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি আন্দোলনকারীরা। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা নানাভাবে এ আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তারা আন্দোলনকারীদের বোঝাতে চেয়েছেন এই মুহূর্তে যদি কোটা বাতিল বা সংস্কার করা হয় তাহলে একটি অংশ এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করতে পারে। কোটা সংস্কার বা বাতিল যে সিদ্ধান্তই সরকার গ্রহণ করুক সেই সিদ্ধান্তই হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এমনও বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই এ আন্দোলন থামেনি।

সর্বশেষ গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদে ‘সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকতে হবে, কমানো যাবে না’ বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্যই, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই তো আজ আমরা স্বাধীন। তাদের অবদানেই তো আমরা দেশ পেয়েছি।তাই কোটা থাকবে।’ এ বিষয়ে কাজ করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলেও সংসদকে জানান প্রধানমন্ত্রী।

২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, কমিটি এখনও কাজ শুরু করেনি। কারণ বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়ে এলে তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পরের কাজগুলো করতে পারবে। বিষয়টি জটিল এবং সময় লাগবে।

সোমবার (২ জুলাই) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই কমিটি গঠনের কথাই জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ কমিটি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যলোচনা, বাতিল ও সংস্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সুপারিশ প্রণয়ন করবে এবং ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার বিষয়টি সরকারের ওপর মহলের বিষয়। এছাড়া বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ প্রধানমন্ত্রী চান না কোটা প্রথা বিলুপ্ত হোক। তাই ওপর মহলের নির্দেশনা ছাড়া কোনও সিদ্ধান্তই দিতে পারবে না এ কমিটি। কমিটি যে সুপারিশই করুক, তা হতে হবে ওপর মহলের পরামর্শ মোতাবেক। তাই কমিটিকে দেওয়া ১৫ দিনের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে কমিটি বাড়তি সময় চাইতে পারে। এতে আবার হতে পারে বিলম্ব।

কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিদ্যমান ৩০ শতাংশ কোটা কমিয়ে ২০ শতাংশ রাখার সুপারিশ করতে পারে। যদি সরকার কমিটির সুপারিশ মতো ২০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য রেখে সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট হতে পারে। এ রিটে কোটা সংস্কার হোক আর বাতিল হোক সে সিদ্ধান্ত হয়ে যেতে পারে স্থগিত। এমনটি যদি হয়, তখন আর কারোরই কিছু করার থাকবে না। সরকারের কোটা সংস্কার বা বাতিলের সিদ্ধান্ত আদালত কর্তৃক স্থগিত হলে বিদ্যমান পদ্ধতি বা বিদ্যমান কোটাই বহাল থাকবে। এমনটি হলে সরকারের ইচ্ছাই পরোক্ষভাবে বাস্তবায়ন হবে বলেই মনে করেন তারা।

জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের কোনও নির্দেশনা না পাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এতদিন কোনও কাজই শুরু করতে পারেনি। সংসদ সচিবালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তারা কোনও লিখিত নির্দেশনাও পাননি। এ কারণে সরকারের এ দু’টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কোটা সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা এখনও কোনও নির্দেশনা পাইনি।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি বাতিলের বিষয়টি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা আসবে। অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও নির্দেশনা আসতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেভাবে অগ্রসর হতে বলবেন, আমি সেভাবে বাকি কাজ করবো।’

খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here