কেউ বেআইনি কাজ করলে কে তাদের মাফ করবে?

0
301

খবর৭১ঃ আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) সদস্যরা।

বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় তারা বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। তারা নিজেদের ভুলও বুঝতে পারবে।

তবে জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, মাফ করার প্রশ্ন এখানে নেই। আমরা কাউকে মুক্তি দেয়ার অধিকার রাখি না। কেউ বেআইনি কাজ করলে কে তাদের মাফ করবে? আমরা মাফ করার কে? বিষয়টি আইনি।

তিনি বলেন, যারা গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে নিষ্পাপ শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া যেতে পারে। এ রকম কেউ হয়রানির শিকার হলে তা দেখা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল।

বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বিওটি সভাপতি-সদস্যরা বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ভিসিদের পাঁচটি নির্দেশনা দেন। এগুলো হচ্ছে, কেউ জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নন। তাকেও জবাবদিহি করতে হয়। ভিসিদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে ও অপির্ত দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হলে জবাবদিহি করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে কিনা সেসব বিষয়ে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে সচেতন হতে হবে। সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সমস্যা সমাধানে ট্রাস্টি বোর্ডকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ট্রাস্টি বোর্ডের সহায়তা নিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কেউ যেন ফয়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য তাদের মোটিভেশন করতে হবে। এতে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে তাদের বুঝিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগ করানোসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। অভিভাবকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা জঙ্গি সম্পৃক্ততা বা মাদকাসক্ত না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে এতেও অভিভাবকদের সহায়তা নিতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, প্রতিবাদকে সমর্থন করি। তারা আমাদের নানা বিশৃঙ্খলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে অনেক দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, যেগুলো সময়সাপেক্ষ তাও বাস্তবায়িত হবে। মন্ত্রিসভায় আইনের অনুমোদন হয়েছে। পরবর্তী অধিবেশন পাস হলে কার্যকরী হবে। কিন্তু স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাদের আন্দোলন বন্ধ করার পর কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছিল।

নাহিদ বলেন, নানা গুজব ছড়িয়ে এই শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কিছু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এই শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানো হয়েছিল। ফোনালাপ ফাঁসের মাধ্যমে দেশবাসী তা জানতে পেরেছে।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তা কোনো সময় সমর্থন করব না। আপনারাও করেননি। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনের আলোকে পরিচালনার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, কেউ ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। কেউ সনদ বাণিজ্য করেছেন। এখানে কোনো ব্যবসা নয়, শিক্ষায় অবদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করুন। মালিক নন, উদ্যোক্তা হোন।

সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। আমরা চাই না একটি শিক্ষার্থীও ক্ষতিগ্রস্ত হোক। চাই না তারা কারও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হোক।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, এ সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তারা সড়কে ছিলেন। কিন্তু তাদের ওপর বাস তুলে দিয়ে খুন করা হয়। আরও কয়েকজন আহত হন। ওই ঘটনার রেশ ধরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। পঠন-পাঠন বিঘ্নিত হয়েছে। কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চাই না কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ হোক।

অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা কোমলমতি। না বুঝে অনেকে অপরাধ করেছে। তাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করে দেয়া হোক। আমি শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই।

এছাড়া আশা ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ডালিম চন্দ্র বর্মণ, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আবদুল মান্নান, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল করীমসহ আরও কয়েকজন ছাত্রদের সাধারণ ঘোষণা করে তাদের রিমান্ড বাতিল এবং ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। এ সময় অবশ্য দু’একজন দুষ্কৃতকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তির আওতায় নেয়ার ব্যাপারে মত দেন।

আন্দোলনের শেষের দুদিন গত ৬ ও ৭ আগস্ট সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিলেন। এর মধ্যে ৭ আগস্ট চারটি রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। ওই সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আটকে রাখার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন কয়েকজন ভিসি।

এর মধ্যে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ভিসি আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ঘটনা ঘটার পরপরই প্রক্টরিয়াল বডিকে সক্রিয় করেছি। শিক্ষকদের দিয়ে কমিটি করে রাস্তা থেকে তুলে এনেছি। আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে রাখা যাবে না। ক্লাস বন্ধ করে দিলে তারা বাইরে থাকবে। ঘটনার সার্বিক বিশ্লেষণ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন পুলিশ না ঢুকে। নিরপরাধদের ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন।

সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আল আমিন মোল্লা বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের প্রতিষ্ঠানেও কিছু ছাত্র বিভ্রান্ত হয়েছিল। বিষয়টি টের পাওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নিই। আমাদের একজন ছাত্রও ক্যাম্পাসের বাইরে যায়নি। এটা শিক্ষকদের টিম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা সম্ভব হয়। সবাই মিলে ভালোবাসা ও পরামর্শের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভেতরে রাখতে পরীক্ষা ও ক্লাসগুলো অব্যাহত রাখা হয়। এভাবে আমরা সফল হই।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আতিকুল ইসলাম বলেন, ৬ আগস্ট নর্থ সাউথ আক্রান্ত হয়নি। ঘটনার একপর্যায়ে বহিরাগত ৭-৮০০ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। সেখানে পুলিশ বা অন্য কেউ অ্যাকশনে গেলে বড় রকমের সমস্যা হতো। আমরা পুলিশ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে ক্যাম্পাসে ঢোকা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে বের করে দিয়েছি। পরের ঘটনা ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে সভাপতি শেখ কবির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক বেনজির আহমেদ, সমিতির পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here