কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমির রজতজয়ন্তীতে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের নিয়ে ভাওয়াইয়া উৎসব

0
368

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
নানা আনন্দ আয়োজনে বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমির ২৫ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত হলো ভাওয়াইয়া উৎসব। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পাচপীরে বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমীর আয়োজনে ও সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সহযোগীতায় অনুষ্ঠিত হয় এ ভাওয়াইয়া উৎসব। উৎসবে যোগদেন কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলাসহ ভারতের কুচবিহার ও আসাম অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গানের শিল্পীরা।
উত্তরের মানুষের যাপিত জীবন আর সংস্কৃতির সুরেলা বর্ণনা রয়েছে ভাওয়াইয়া গানে। শত বছরের ধারাবাহিকতায় আজও এই গান এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের সংগীত। ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন, ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দিন, হরললাল রায়, রথীন্দ্রনাথ রায়সহ এ অঞ্চলের অসংখ্য শিল্পী এই গানকে সমৃদ্ধ করেছেন নিজস্ব গায়কী ঢঙে। আর নদী কেন্দ্রীক এ অঞ্চলের মানুষের জীবন চিত্র উঠে এসেছে ভাওয়াইয়ার সুরে ও কথায়। বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমির রজতজয়ন্তী উদযাপনে উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর হাইস্কুল মাঠে দিনব্যাপী আনন্দ আয়োজনে মেতে ওঠে শিল্পী সংগঠকসহ এ অঞ্চলের ভাওয়াইয়া প্রেমীরা।
ভাওয়াইয়া এখন আর শুধু এ অঞ্চলের গান নয়। এর  সুুর ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশসহ দেশের বাইরেও। সম্প্রসারণ ও এর অতিত ঐতিহ্য ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা করছেন এ অঞ্চলের শিল্পী সংগঠকরা। ভাওয়াইয়া গান সম্প্রসারণ হলে শুধু এ অঞ্চলের সংস্কৃতি বিকশিত হবে না-বিকশিত হবে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য। এতে ভাওয়াইয়ার প্রতি আকৃষ্ট হবে নতুন প্রজন্ম। এমনই বলছে এ অঞ্চলের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
ভারতের কুচবিহার থেকে ভাওয়াইয়া উৎসবে যোগ দিতে আসা মঞ্জু রানী বর্মা জানান, ভাওয়াইয়া গান বাংলাদেশের উত্তারাঞ্চলের আঞ্চলিক গান হলেও এ গান এখন বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বাংলা ভাষীদের মাঝে জনপ্রিয় গান। আমি এ উৎসবে যোগ দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমী পরিচালক ভূপতি ভূষণ বর্মা জানান, ভাওয়াইয়া এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের গান। ভাওয়াইয়া গান নতুন প্রজন্মকে শেখানোর উদ্দিশ্যে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমী প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ পর্যন্ত এই একাডেমী থেকে ২ হাজারেরও বেশি শিল্পীকে ভাওয়াইয়া গানের তালিম দিয়েছি। এদের মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি শিল্পী রেডিও টেলিভিশনে গানের জন্য তালিকা ভুক্ত হয়েছে।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও ভাওয়াইয়া গান গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, ভাওয়াইয়া গান হচ্ছে এই রংপুর অঞ্চলের ভুমির গান। এখানকার জীবন, এখানকার সংস্কৃতি, এখানকার আবহ সবকিছুই গানের সুরে এবং কথায় ফুটে ওঠে। আমরা সে কারনে লক্ষ্য করি সংস্কৃতির এতো রকম নতুনত্ব তৈরি হয়েছে, আমরা যদি বলি যে আকাশ সংস্কৃতি যখন বাংলা সংস্কৃতিকে গ্রাস করবার একটা জায়গা তৈরি করছে। এই জায়গাতেও কিন্তু আমরা দাড়িয়ে বলতে পারি যে ভাওয়াইয়া গানের সেই প্রাণ কিন্তু কমে নাই। এখনও কিন্ত রংপুর অঞ্চলে ভাওয়াইয়া গান মানে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়।
ভাওয়াইয়াসহ দেশের আঞ্চলিক সকল গান টিকিয়ে রাখতে রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি স্থানীয় এ সংগঠনগুলোতে পৃষ্ঠপোষকতা করবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here