কুমির বিশেষজ্ঞ না থাকায় হুমকির মুখে সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র

0
349

হেদায়েত হোসাইন, বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
সুন্দরবনের করমজলে কুমির বিষেজ্ঞ না থাকায় হুমকির মুখে একমাত্র বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে লোনা পানির কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের ৯১টি ডিম থেকে একটি বাচ্চাও জন্ম হয়নি। গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রটিতে কুমির বিশেষজ্ঞ না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে ধারনা করছে বন বিভাগ। প্রজনন কেন্দ্রে প্রায় প্রতিবারই কোন না কোন সমস্যায় কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের দেয়া ডিম থেকে ফুটছে না বাচ্চা। তবে, এই বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রেটিতে কুমির বিশেষজ্ঞ থাকা অবস্থায় ১২ বছরে কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৭২৩টি ডিম থেকে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৪৬৫টি বাচ্চা।
সুন্দরবন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় লোনা পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বাড়াতে ২০০২ সালে করমজলে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জমিতে বন বিভাগের উদ্যোগে বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়। এটি দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এরপর কুমির লালন-পালন ও বন্য প্রাণীর ওপর বিশেষ প্রশিণের জন্য বন বিভাগ তাদের দুজন কর্মকর্তা নির্মল কুমার হাওলাদার ও আ. রবকে এক বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে পাঠায়। এরপর থেকে আ. রব এই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলেদের জালে আটক ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রেটির প্রজনন কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি অবসরে যান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রের কোনো কুমির অথবা প্রাণী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়নি বনবিভাগ। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে লোনা পানির দুটি স্ত্রী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং রোমিও নামের একটি পুরুষ কুমির রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে গত দু’বছর আগপর্যন্ত এই কেন্দ্রে জুলিয়েট ও পিলপিলের মোট ৭২৩টি ডিম থেকে ৪৬৫টি বাচ্চা হয়েছে। ২০১৬ সালে জুলিয়েট ও পিলপিলের ৯৮টি ডিম থেকে ৪৭টি বাচ্চা হয়। সে সময় ৫১টি ডিম নষ্ট হয়ে যায়। গত গত বছরের জুলিয়েট ৪৩টি ও পিলপিল ৪৮টি ডিম দেয়। গত বছর থেকে এই কেন্দ্রটিতে কুমিরের ডিম থেকে আর কোন বাচ্চার জন্ম হয়নি।
এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, কুমিরের ডিম ইনকিউবেটরে দেয়ার পর থেকে নিয়মিত পর্যবেণে রাখতে হয়। কোনো কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হয়। সেটি না করার কারনেই গত দু’বছর ধওে পিলপিল ও জুলিয়েটের দেয়া ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছেনা। বনবিভাগ এ বিষয়ে নজর না দেয়ায় বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র হুমকির মুখে পড়েছে।
করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, আমরা যারা করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কাজ করছি কুমির বিষয়ে আমাদের কারো কোনো প্রশিক্ষণ নেই। আমরা ধারণার ওপর ভরসা করে কাজ করি। আমাদের এখানে জাকির নামে একজন রয়েছে যে কুমির বিষয়ে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত আ. রবের সাথে দীর্ঘদিন সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গত দুই বছর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেছি। তবে এবার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও জুলিয়েট ও পিলপিলের ডিম থেকে আমরা কোনো বাচ্চা ফোটাতে পানিনি। আমরা ধারণা করছি, ডিম নিষিক্ত না হওয়াই এর প্রধান কারণ।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ও জুলিয়েটের ডিম নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বন বিভাগ গুরুত্বের সাথে দেখছে। ইতিমধ্যেই করমজল বন্যপ্রণী প্রজনন কেন্দ্রের জন্য একজন কুমির বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে লিখিত ভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বনবিভাগ একজন কুমির বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেবে।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here