কাল থেকে বাড়তে পারে বৃষ্টি; বাড়তে পারে নদীর পানি

0
558
কাল থেকে বাড়তে পারে বৃষ্টি; বাড়তে পারে নদীর পানি
ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ

বন্যাকবলিত এলাকার সোয়া দুই লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধে অবস্থান করছে। এর বাইরে আরও প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। নিজেদের খাবার ও আশ্রয়ের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি অনেকে গবাদিপশুর জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোতে পানি কিছুটা বেড়েছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নদ-নদীর পানি আবার বাড়তে পারে।

গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ প্রতিবেদন অনুযায়ী এখনো ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ জন বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধের ওপর বসবাস করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায়। এই দুই জেলায় যথাক্রমে ৭৪ হাজার ও ৬৪ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে ৪২ হাজারের মতো মানুষ তাদের বাড়িঘরে ফিরে গেছে।

দুর্যোগ প্রতিবেদন অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরও অনেক এলাকায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নদীতীরবর্তী অনেক এলাকার মানুষ বাড়িতে ফিরতে পারছে না।

কাল থেকে বাড়তে পারে বৃষ্টি; বাড়তে পারে নদীর পানি
ছবিঃ সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত বেশ কয়েকটি এলাকার নদ-নদীতে পানি কমতে শুরু করলেও পর্যাপ্ত ত্রাণ ও চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকাগুলোতে অনেকেই ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি সহায়তার বাইরে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এখনো ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পুরোদমে মাঠে নামেনি বলে জানা গেছে।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে সাত লাখ হচ্ছে শিশু। এসব বন্যাকবলিত মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর সংকটে ভুগছে। এসব এলাকায় নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে।

সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ত্রাণ (জিআর ক্যাশ) হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৬৯ হাজার টাকা, শুকনা খাবারের ১ লাখ প্যাকেট, ১ হাজার ৭০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও ৮ হাজার তাঁবু দেওয়া হয়েছে।

তবে সরকারের ত্রাণ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন দুর্যোগবিষয়ক বেসরকারি সংগঠনগুলোর জোট ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকটর বাংলাদেশের কারিগরি উপদেষ্টা আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির আরেক দফা অবনতি হতে পারে, তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কোরবানির জন্য উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা যে গরুগুলো লালনপালন করেছেন, সেগুলোকে নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো এসব এলাকার মানুষদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব শাহ কামাল বলেন, ‘এখন থেকে বন্যা পরিস্থিতির ধারাবাহিকভাবে উন্নতি হবে। মানুষের পাশাপাশি আমরা গরু-ছাগলের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাধারণত কেউ গরু-ছাগল নিয়ে আসে না। তারা বাঁধে সেগুলোকে রাখতে আগ্রহী। তাদের এ ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

কাল থেকে বাড়তে পারে বৃষ্টি; বাড়তে পারে নদীর পানি
ছবিঃ সংগৃহীত

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মুন্সিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট ও বগুড়ার পানি কমতে থাকবে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ৯৩টি পয়েন্টের মধ্যে ৩৫ টির পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আর বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যাচ্ছে ২১টি পয়েন্টের পানি। এখনো দেশের ১৪টি জেলায় বন্যার পানি রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here