কাঠমান্ডু পোস্টে ক্যাপ্টেন আবিদকে নিয়ে দেয়া তথ্য ভিত্তিহীন: ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

0
448

খবর৭১ঃনেপালের ‘দি কাঠমান্ডু পোস্ট’ পত্রিকায় সোমবার (২৭ আগস্ট) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ১২ মার্চের বিএস-২১১ ফ্লাইট সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান সম্পর্কে কিছু মনগড়া তথ্য দেয়া হয়েছে যা ভিত্তিহীন বলে মতপ্রকাশ করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী (আইকাও কর্তৃক প্রণোদিত) যে কোনো দুর্ঘটনা-পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ধরনের অসমর্থিত মতামত প্রকাশ কোনো গণমাধ্যমের কাছেই কাম্য নয়।

আইকাও এর এনেক্স ১৩ এর নিয়মানুসারে নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিমান চলাচলবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এই দুর্ঘটনা বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।

একটি দুর্ঘটনা তদন্তাধীন অবস্থায় এ ধরনের প্রতিবেদন অযাচিতভাবে এয়ারলাইন্স এবং ক্রুদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা বা দুর্ঘটনা ঘটে থাকার প্রকৃত কারণকে আড়াল করার জন্য করা হতে পারে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ দি কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করে এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যম, সম্মানিত যাত্রীরা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের এ ধরনের মনগড়া ও ভিত্তিহীন রিপোর্টে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছে।

সোমবার নেপালের ইংরেজি দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট দেশটির সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে বলা হয়, ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিএস২১১ ফ্লাইট বিধ্বস্ত হওয়ার দুর্ঘটনার জন্য নিহত পাইলট আবিদ সুলতান দায়ী।

বিমানটির পাইলট আবিদ সুলতান প্রচণ্ড ব্যক্তিগত মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। আর তার ধারাবাহিক কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফ্লাইটের পুরো সময় প্রধান পাইলট আবিদের আচরণ তার স্বাভাবিক চরিত্রের সঙ্গে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না’। আর এ কারণেই তাৎক্ষণিকভাবে তিনি লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি নেপালের তদন্তকারীদের।

প্রতিবেদনের বরাতে কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, অবতরণের ছয় মিনিট আগে পাইলট আবিদ বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নিচে নামিয়ে লক করার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন- গিয়ার নেমেছে, তিনটি সবুজ বাতি জ্বলছে।

সহকারী পাইলট পৃথুলা রশিদ যখন চূড়ান্ত ল্যান্ডিং তালিকা পরীক্ষা করার সময় দেখতে পান গিয়ার নিচে নামেনি। কয়েক মিনিট পর ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের বিমানটি রানওয়ের একপাশে বিধ্বস্ত হয় এবং অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়।

নেপালি দৈনিকটি জানিয়েছে, ক্যাপ্টেন আবিদের সাড়ে পাঁচ হাজার ঘণ্টার উড্ডয়নের রেকর্ড ছিল। তবে তিনি তার ধূমপানের অভ্যাসের তথ্য বিমান সংস্থাকে জানাননি।

নেপালের তদন্তকারীরা দাবি করেন, এক ঘণ্টার ওই ফ্লাইটে আবিদ ক্রমাগত ধূমপান করেন, যা থেকে প্রমাণিত হয় ককপিটে থাকার সময়ে তিনি মানসিক চাপে ছিলেন।

তদন্তকারীরা উল্লেখ করেছেন, ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি ক্যাপ্টেন আবিদ প্রচণ্ড মানসিক চাপ মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ ছাড়া তাকে বিষণ্ণ ও কম ঘুমের সমস্যায় থাকা মানুষ মনে হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন।

ওই ভয়েস রেকর্ডারে ককপিটে তার ও তার সহকারী পাইলটের মধ্যে এক ঘণ্টার কথোপকথন রেকর্ড হয়েছিল। ওই কথোপকথনের বরাতে তদন্তকারীরা বলেছেন, আবিদ পরিস্থিতির হালহাকিকত সম্পর্কেও সচেতন ছিলেন না বলে তাদের মনে হয়েছে।

তবে গত ২২ এপ্রিল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও ইমরান আসিফ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, বিধ্বস্ত ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন আবিদ শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তার অবসাদগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্নটি অবান্তর।

ক্যাপ্টেন আবিদের দুর্ঘটনা-পূর্ববর্তী সর্বশেষ মেডিকেল রিপোর্টটিতে তিনি ফ্লাইংয়ের জন্য ফিট ছিলেন। তার মেডিকেল রিপোর্ট ছিল ক্লাস ওয়ান। বাংলাদেশের পাইলটদের মধ্যে ১২ জন ডিসিপি পাইলট আছেন, আবিদ তাদের অন্যতম ছিলেন।

ইমরান আসিফ আরও জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার আগে নেপালের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে পাইলটকে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনাবলি দেয়া হয়েছিল। কাঠমান্ডুর কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ইউএস-বাংলার পাইলটদের ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স দেয়ার পর তা বাতিল না করেই এয়ারক্রাফটিকে অন্য জায়গায় হোল্ডিং করতে বলা হয় এবং একই সময় অন্য এয়ারলাইনসের ফ্লাইট অবতরণ করতেও দেয়া হয়।

একটি ফ্লাইটকে দেয়া অবতরণের অনুমতি বাতিল না করেই অন্য ফ্লাইটকে অবতরণ বা উড্ডয়ন করতে দেয়া আন্তর্জাতিক নিয়মের ব্যত্যয়।

গত ১২ মার্চ ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানটিতে থাকা ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জনই নিহত হন।

নিহতদের মধ্যে বিমানের ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ও কো-ক্যাপ্টেন পৃথুলা রশিদসহ ২৭ বাংলাদেশি, ২৩ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক ছিলেন। আহত হন নয় বাংলাদেশি, ১০ নেপালি ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here