করোনায় বিলম্বের শঙ্কা পদ্মা সেতুর কাজ

0
469
করোনায় বিলম্বের শঙ্কা পদ্মা সেতুর কাজ

খবর৭১ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের (2019-nCoV) প্রভাব পদ্মা সেতুতেও পড়তে পারে। কারণ এই সেতু নির্মাণে তিন শতাধিক চীনা নাগরিক জড়িত। যাদের অনেকে ছুটিতে রয়েছেন। মহামারীর কারণে ছুটির সময় বাড়লে সেতুর অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। এদিকে জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুকে বাবা-মাসহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জ্বরের সঙ্গে শিশুটির কাশিও রয়েছে।

মঙ্গলবার রাতেই তাদের আশকোনা হজ ক্যাম্প থেকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ইতিমধ্যে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। বিশ্বের ২৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৪৯২ জনের। তবে বাংলাদেশে এখনও কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।

নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পের যেসব চীনা কর্মী দেশে গেছেন, তাদের ছুটি প্রলম্বিত হলে প্রকল্পের অগ্রগতিতে সমস্যা হতে পারে। এই মন্তব্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতর প্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নাগরিক সেবা প্রদানবিষয়ক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

প্রকল্পে চীনা নাগরিকদের পরিসংখ্যান দিয়ে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বর্তমানে কর্মরত চীনা নাগরিক ৯৮০ জন। এর মধ্যে ছুটিতে আছেন ৩৩২। ছুটি থেকে ফিরেছেন ৩৩ জন। যাদের ৮ জন ছাড়া বাকিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বাইরে থাকা চীনাদের ছুটি দু’মাসের বেশি হলে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হবে।

আইইডিসিআরে সংবাদ সম্মেলন : আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মাত্রা চীনে অতি উচ্চ। এ ছাড়া পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উচ্চ এবং সারা বিশ্বে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, চীনের সব রোগীর মধ্যে ৯৭ ভাগ হুবেই প্রদেশের। তিনি বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত চীনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪২৫। রোগীদের মাঝে মৃত্যুহার চীনে ২ দশমিক ১ ভাগ, হুবেই প্রদেশে ৩ দশমিক ১ ভাগ। রোগীদের মাঝে ৮০ ভাগের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ৭৫ ভাগ রোগী অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত, মৃত্যুবরণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ।

আশাকোনা কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সাতটি ডরমিটোরিতে চীনফেরত যাত্রীরা অবস্থান করছেন। চিকিৎসাসেবা ও নার্সিংসেবা কার্যক্রমকে সেনা কর্তৃপক্ষের মেডিকেল সার্ভিস পুরোটাই সহায়তা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সব ওষুধ সরবরাহ করছে। আইইডিসিআর যাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও যাত্রীদের রোগতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করছে। সামরিক বাহিনীর মিলিটারি পুলিশ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। এ উদ্দেশ্যে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসোলেশন শাখা খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কারও শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি।

করোনা ঝুঁকিতে মোংলা বন্দর : করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মুখে রয়েছে মোংলা বন্দর। চীনা নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের যাতায়াত রয়েছে এ বন্দরে। বন্দরে জাহাজে আসা নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেই যথাযথ ব্যবস্থা। ফলে বিদেশি জাহাজের পণ্য খালাস বোঝাই কাজ করতে গিয়ে নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে।

মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে মোংলা বন্দরে ৪-৫ বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসছে। আর প্রতিটি জাহাজের নাবিকের সংখ্যা ৩০-৪০ জন। সেই হিসাবে এ বন্দরে গড়ে নতুন করে দেড় শতাধিক বিদেশি নাগরিকের আগমন ঘটে। অপরদিকে পণ্য খালাস-বোঝাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৪-৫ দিন। বর্তমানে এ বন্দরে ১৮টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে চীনসহ রয়েছে বিভিন্ন দেশের নাগরিক। এ ছাড়া মোংলা ইপিজেড ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পে কাজ করছেন অসংখ্য চীনা নাগরিক।

এ প্রসঙ্গে মোংলা পোর্ট হেলথ মেডিকেল অফিসার সুফিয়া খাতুন জানান, তাদের কাছে দুটি লেজার ডিটেক্টেটর স্কানার রয়েছে। একটি জেটিতে অপরটি জাহাজে পাঠানো হয়। তবে বহির্নোঙরে আসা জাহাজে স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছাতে পারে না। এ দফতরে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, স্বল্প জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহারসহ বিদেশি নাবিকদের সংস্পর্শে না যাওয়ার জন্য। তবে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি ও শঙ্কা রয়েছে।

মৃতের সংখ্যা ৪৯২, আক্রান্ত ২৪ হাজার : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে একদিনেই আরও ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চীনের মূল ভূখণ্ড ও এর বাইরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯২ জন। মঙ্গলবার চীনে নতুন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৩২৪ জন। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছে দু’জন। মঙ্গলবার হংকংয়ে ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রাণ হারান। তিনি কিছুদিন আগে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ফিরেছিলেন। গত সপ্তাহে ফিলিপাইনে মারা যান উহানফেরত আরও একজন।

এদিকে, জাপানের ইয়াকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রমোদতরীতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ এই ১০ জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে ২৭৩ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করা মাত্র ৩১টি ফলাফলের মধ্যে। প্রমোদতরীটিতে মোট যাত্রীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০। হংকংয়ে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৭ জন। এ কারণে শহরটির সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত চীনের বাইরে অন্তত ২৪টি দেশে ১৭৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

১৬ দিনে চীন থেকে ফিরেছেন ৭১৪৬ যাত্রী : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ১৬ দিনে (২১ জানুয়ারি-৫ ফেব্রুয়ারি) চীন থেকে ৭ হাজার ১৪৬ যাত্রী দেশে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে (আইইডিসিআর) ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে এ পর্যন্ত কোনো যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।

তিন শতাধিক নাগরিক ফিরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : উহান থেকে তিন শতাধিক নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দুটি বিমানে করে ওই যাত্রীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার উহান ছেড়েছে বিমান দুটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here