করোনাভাইরাস আতংকে মাস্ক কেনার হিড়িক; সৈয়দপুরে বাজার থেকে মাস্ক উধাও, দামে আগুন

0
656

খবর৭১:

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে: দেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তের সংবাদের পর সৈয়দপুর শহরের ফার্মেসী, সার্জিক্যাল ও প্রসাধনী দোকান থেকে মাস্ক উধাও হয়ে গেছে। গত চারদিন থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক কেনার হিড়িক পড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে মাস্ক। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দোকানে মাস্ক থাকলেও ৫ থেকে ৬ গুণ দামে মাস্ক বিক্রি করছে। এ অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মাস্কের দাম বেড়েই চলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের ফার্মেসী, সার্জিক্যাল ও প্রসাধনী বিক্রির দোকান ঘুরে এমন চিত্র মিলেছে।

শহরের শেরে বাংলা সড়কে কয়েকটি ফার্মেসী দোকানে দেখা যায়, মাস্ক কিনতে সাধারণ মানুষ ফার্মেসী দোকানে ভিড় করছেন। কিন্তু দোকানে মাস্ক না থাকায় এ দোকান ও দোকান ছুটছেন। তারপরেও মিলছেনা মাস্ক।

এতে বাজার থেকে মানসম্মত মাস্ক হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে মুনাফা লুটতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাস্ক মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। এসব ব্যবসায়ীদের কারণে ৫ থেকে ৬ গুণ দামে মাস্ক বিক্রি করছে। এ অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে মাস্কের দাম বেড়েই চলেছে। আতংকের কারণে বাধ্য হয়ে বেশি দামে মাস্ক কিনছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে মাস্ক কিনতে আসা আবু তালেব নামের একজন ক্রেতা বলেন গত সোমবার আমি একটি মাস্ক ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছি। অথচ গতকাল বৃহস্পতিবার একটি মাস্ক কিনতে হয়েছে ৬০ টাকা দামে। তাও বেশ কিছু ফার্মেসী দোকান ঘুরে তবেই মাস্ক পাওয়া গেছে। অথচ সপ্তাহ আগে এন মাস্ক-৯৫, পি মাস্ক-৯৫, এন ম্সাক-৯৯, এন মাস্ক-১০০, এয়ার পিউরিফিকেশন মাস্ক ও রেসপ্লো মাস্ক পাওয়া যেত। এখন বাজার থেকে এসব মাস্ক লাপাত্তা হয়ে গেছে।

এদিকে মাস্ক সংকটের পাশাপাশি বাজারে জীবাণু নাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংকট দেখা দিয়েছে। বাজার এই পণ্যটিও বাড়তি দামে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। ফার্মেসী দোকানীরা বলছেন, দেশে করোনা আক্রান্তের খবর জানার পর মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণু নাশক পণ্যের বিক্রি বেড়ে গেছে। বেশীর ভাগ দোকানে মাস্ক শেষ হয়ে গেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। তবে বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মূল্য নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও তা মানছেন না স্থানীয় অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাজারে ৫ টাকার সাধারণ মাস্ক ২০ টাকায়, ১০ টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক ৪০ টাকায় ও ৫০ টাকার ফিল্টার মাস্ক ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বাড়তি দাম দিয়েও চাহিদামত মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।

শহরের ফার্মেসী ও সাজিক্যাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন বাজারে মানসম্মত সব মাস্ক চীন থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে চীন নিজেদেরই চাহিদা মেটাতে পারছে না। এই অবস্থায় মাস্ক আমদানি কমেছে। বর্তমানে ঢাকার পাইকারী বাজারে ১০০ পিস প্যাকেটের সার্জিক্যাল মাস্ক ১০০ টাকার স্থলে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা ও ৫০ পিস প্যাকেটের একই মাস্ক ১০০ টাকার স্থলে ১২০০ টাকায়, ১২ পিস প্যাকেটের দেশী কটন মাস্ক ৫৫ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় এবং ১২ পিস প্যাকেটের ফিল্টার মাস্ক ৩০০ টাকার স্থলে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দামের বিরুপ প্রভাব পড়েছে মাস্কের বাজার। এ নিয়ে কথা হয় ইমরান ফার্মেসীর মো. ইমরানের সঙ্গে। তিনি জানান, তার দোকানে পূর্বে মজুদ করা মাস্ক প্রথম দু’দিনেই শেষ হয়ে গেছে। অর্ডার দিয়েও মাস্ক সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রতিদিনই অসংখ্য ক্রেতা আসছেন মাস্ক সংগ্রহ করতে। বর্তমানে বেশীর ভাগ দোকানে মেডিকেটেড মাস্কের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। শহরের শহীদ সামসুল হক সড়কে প্রসাধনী দোকান সোহাগ সাজ ঘরের মালিক মো. নিয়াজ বলেন, ক্রেতাদের চাহিদার মুখে মানসম্মত সব ধরণের মাস্ক শেষ হয়ে গেছে। সাধারণ কটন মাস্কের মজুদও শেষ হওয়ার পথে। পাইকারী বাজারে বেশী দামে কেনায় বাড়তি দামে মাস্ক বিক্রি করতে হচ্ছে। করোনার কারণে মহাজনরা দাম ৪/৫ গুণ বৃদ্ধি করেছে। উচ্চ মূল্যের কারণে নতুন করে মাস্ক আনছি না।

তিনি বলেন, স্থানীয় অসাধু কিছু ব্যবসায়ী দাম বৃদ্ধির কারসাজি করছেন। তবে সরকারের ওষুধ প্রশাসন সার্জিক্যাল মাস্কের দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here