কপিলমুনি হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ

0
295

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা):
পাইকগাছার কপিলমুনি ১০ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালের ডাক্তার সংকট থেকে শুরু করে কর্তব্যে অবহেলার পর এবার হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য সরবরাহে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
খাদ্য সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধানে সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়,সেখানকার ভর্তিকৃত রোগীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীর কেউ জানেইনা যে,রোগীদের মধ্যে প্রতিদিন ঠিক কোন প্রকার ও পরিমাণে খাদ্য বরাদ্দ রয়েছে। হাসপাতাল অভ্যন্তরের কোথাও টানানো নেই সরকারি বরাদ্দের খাদ্য তালিকা। ডাক্তার ছুটিতে থাকায় হাসপাতাল অভ্যন্তরের ইমার্জেন্সী বেডে অলস সময় কাটানো জনৈক নার্সকে খাদ্য তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আলমারী থেকে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের একটি অস্পষ্ট লেমিনেটিংকৃত তালিকা হাতে ধরিয়ে দেন। যার সাথে হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে সরবরাহকৃত খাদ্যের আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
স্মারক নং-উপঃকমঃ/পাইক খুল/২০১৩’র ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের ঐ তালিকানুযায়ী দেখা যায়, সপ্তাহের রবি,মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার রোগী প্রতি চাউল ৪ শ’গ্রাম,ডাল ২০ গ্রাম,মাছ-রুই ১শ’৪৯ গ্রাম,কাতলা ১৭৯ গ্রাম,মৃগেল ২১৭ গ্রাম,গøাস কার্প ২১৭ গ্রাম,তেলাপিয়া ৩১৯ গ্রাম,তরকারী হিসেবে কাচা কলা ১ শ’৫০ গ্রাম,কাচা পেঁপে ২০৯ গ্রাম,মিষ্টি কুমড়া ২০২ গ্রাম সহ অন্যান্য মসলা ও তরকারী। শুক্র,শনি ও সোমবার একই পরিমাণের চাল,ডাল ও তরকারির পাশাপাশি বয়লার মুরগীর মাংস ২০২ গ্রাম ও বুধবার খাসীর মাংস দেওয়ার কথা। এছাড়া সকালের নাস্তায় জনপ্রতি ২ শ’গ্রাম পাউ রুটি,ডিম ১ টি,সাগর বা চাপা কলা ১টি চিড়ে ১শ’৫০ গ্রাম,চিনি ৭৪.৫৭ গ্রাম। তবে খাদ্য তালিকার সাথে রোগীদের মধ্যে সরবরাহকৃত খাদ্য তালিকার পার্থক্য ছিল যোজন যোজন। এসময় হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী তালার কানাইদিয়া গ্রামের করিম ফকিরের ছেলে কেচমত কারিকর(৭৫),কপিলমুনি সদরের গোপী বালা সাধুর মেয়ে আন্না রাণী সাধু(৫৫),হাফিজুল ইসলাম(২৫) জানান,তারা অনেকেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সপ্তাহের ৩ দিন মাছ বলতে অধিকাংশই তেলাপিয়া মাছ সরবরাহ করা হয়। তরকারীতেও রয়েছে মারাতœক কারচুপি। সপ্তাহের দু’এক দিন মাংস সরবরাহ করা হলেও তা আকারে খুবই ছোট। সকালের নাস্তায় মাঝে মাঝে ডিম দিলেও কোন দিন কলা দেয়া হয়না তাদের। প্রতি দিন অল্প চিড়া ও চিনি সরবরাহ করা হয়। এসময় আন্না রাণী সাধু বলেন,কতদিন কলা চোখে দেখেননি তার হিসাব নেই। হাফিজুলের সাথে আসা স্বজন পানির পাত্রে রাখা কিছু চিড়া ও অল্প কিছু চিনি দেখিয়ে বলেন ঐদিনের সকালের নাস্তায় তাদের তা সরবরাহ করা হয়েছে। এসময় ঠিকাদারের কোন লোক হাসপাতালে আছেন কিনা তা জানতে চাইলে জনৈকা নার্স এ প্রতিনিধিকে জানান,হাসপাতালের এক সময়ের সুইপার ফজলুর স্ত্রীকে ঠিকাদারের পক্ষে বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছে সেই প্রথম থেকে। ঠিকাদারের পাশাপাশি তিনিই মূলত রোগীদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহে অনিয়ম করে থাকেন।
এব্যাপারে হাসপাতালের ডাক্তারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দায়িত্বরত নার্স জানান,তিনি ৭ দিনের ছুটিতে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত কপিলমুনি হাসপাতালের ডাক্তারসহ নানা সংকটে দীর্ঘ দিন যাবৎ সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। ১ মার্চ থেকে ৭ মার্চ হাসপাতালের একমাত্র ডাক্তার ছুটিতে থাকায় পাইকগাছা খেকে ঐসময়ের জন্য জনৈক ব্রাদার(নার্স)কে দায়িত্ব দিয়ে কপিলমুনি হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর ঐ সময়ের মধ্যে ৫ মার্চ ডুমুরিয়া এলাকার জনৈকা ইতি মিস্ত্রী(১৫) নামের এক বিষ খাওয়া রোগীকে হাসপাতালের বারান্দায় রেখে যথোপযুক্ত চিকিৎসা না দিয়ে তাকে ফেলে রাখায় মূমুর্ষ অবস্থায় এলাকাবাসী ঐ কিশোরীকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতালে নেয়। ঐ ঘটনায় এলাকায় ব্যপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডাঃ সূজন কুমার বিশ্বাস বলেন,পাইকগাছা হাসপাতালেও কোন ডাক্তার না থাকায় ব্রাদার এনামুলকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। খাদ্য সরবরাহে ত্রæটির ব্যাপারে তার জানা নেই।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here