কপিলমুনি কলেজের ভূয়া সনদধারী বাংলা বিভাগের শিক্ষক দীপ্তি দত্তের এমপিও দিতে পদ শূণ্য হচ্ছে

0
366

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা):
কপিলমুনি কলেজে ভূয়া নিবন্ধন সনদে নিয়োগ পাওয়া বাংলা বিভাগের বহু বিতর্কিত শিক্ষক দীপ্তি দত্ত’র এমপিও দিতে এবার তার পদ শূণ্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০১০ সালে নিয়োগ পেয়ে ২০১৩ তে নিবন্ধিত ঐ শিক্ষকের নিবন্ধন জাল হওয়ায় পরিচালনা পরিষদের সুপারিশেও এমপিও বঞ্চিত হন তিনি। এরপর উচ্চতর বাংলার শিক্ষককে বাংলায় প্যাটার্ণভূক্ত করা হলেও সম্প্রতি ডিজির চাপে প্রায় ৫ বছর পর ফের তার বিষয় কোড পরিবর্তন হচ্ছে। আর এতে করে পুনরায় শূণ্য হচ্ছে বাংলা বিভাগের পদটি। ধারণা করা হচ্ছে,দীপ্তিকে এমপিও দিতেই এমনটি করা হচ্ছে। এর আগে কলেজটির পরিচালনা পরিষদের সভায় ফের দীপ্তির এমপিও’র সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুল্ল্যাহ বাহার। তবে কলেজ ফাইল থেকে দীপ্তির নিয়োগকালীণ ভূয়া সনদটি গায়েব হওয়ার বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন কেউ কেউ। সব কিছুর পেছনে কাজ করছে এক অজানা রহস্য এমনটি অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিচালনা পরিষদের এক সদস্যের পাশাপাশি সচেতন এলাকাবাসী।
অভিযোগে জানাগেছে,পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কপিলমুনি কলেজ ২০১০ সালের ৩১ মার্চ দৈনিক জনকন্ঠসহ একাধিক পত্রিকায় বাংলা বিভাগের প্রভাষকসহ বিভিন্ন শূণ্যপদে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০১০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার সাক্ষাৎকার বোর্ডের সুপারিশে ১৯ সেপ্টেম্বর কলেজ পরিচালনা পরিষদের ১৯৮ নং সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে তালা উপজেলার ঘোষনগর গ্রামের জয়ন্ত কুমার পালের স্ত্রী দীপ্তি দত্তকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগপূর্বক যোগদান পত্র দেন কলেজের তৎকালীণ অধ্যক্ষ সহর আলী গাজী। সূত্র জানায়,এর আগে দীপ্তি দত্ত একই কলেজের অনার্স কোর্সে চাকুরীরত ছিলেন। পরে ২০১০ সালে বাংলা বিভাগে শূণ্য পদে নিয়োগ দিলে তিনি সেখানে আবেদন করে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তবে তার নিয়োগের বিষয়টি আগাম নিশ্চিত জেনে সেসময় ঐপদে ১০ জন প্রার্থী আবেদন করলেও লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন মাত্র ৩ জন প্রার্থী। জেনারেল বিভাগে শূণ্য পদে নিয়োগে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক থাকলেও পরীক্ষায় দীপ্তি দত্তকে নিয়োগ দেয়ায় তাদের সে আশংকা প্রমাণিত হয়।
জানাগেছে,দীপ্তিকে ২০১০ সালে নিয়োগ দিলেও তিনি কলেজ শিক্ষক নিবন্ধন পাশ করেন ২০১৩ সালে। পরিচালনা পরিষদ তার নিয়োগ পরবর্তী একাধিকবার এমপিও’র জন্য সুপারিশ পাঠালেও তঞ্চকতাপূর্ণ কাগজ-পত্রের কারণে এমপিও বঞ্চিত হন তিনি। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ মে ২২৭ নং ও ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ২৩৭ নং সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফের তার এমপিও’র সুপারিশ পাঠায় পরিচালনা পরিষদ। তবে সেসময় এমপিও না হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। হতাশ হয়ে বিভিন্ন সময় কলেজে অনিয়মিত হয়েও এর ৩ বছর পর পুনরায় এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে ফের এমপিও’র বিষয়ে অপতৎপরতা শুরু করেছেন তিনি। খানিকটা সম্ভাবনাও মিলেছে এতে। কেননা ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল ৮-২/২৬৮/১৩ নং স্মারকে কলেজ পরিচালনা পরিষদের পক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর উচ্চতর বাংলায় নিয়োগ পাওয়া তাইয়িবুন্নাহারের ইনডেক্স নং ৩০৮৭৪৮৯ এর এমপিও শীটে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য কোড- ১৪৭-১৪৮ এর পরিবর্তে বাংলা উল্লেখ করা হয়েছে তা সংশোধনের জন্য আবেদন পাঠানো হয়। তবে ঐসময় তার কোড পরিবর্তন নাহওয়ায় ঐবছরের ২২ জুন কলেজ পরিচালনা পরিষদের ২১৮ নং সভায় তাইয়িবুন্নাহারের আর্থিক দিক বিবেচনায় তার বেতন উত্তোলনের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকে।
এদিকে কলেজের মূল ফাইল থেকে ঐসময় এমপিও সুপারিশ ফাইলের সেসময়কার নিবন্ধন পত্রটি পাওয়া যাচ্ছেনা। সম্প্রতি অধ্যক্ষকে এনিয়ে দীপ্তির কাগজপত্র দেখতে চাইলে অধ্যক্ষ হাবিবুল্ল্যাহ বাহার এমনটিই জানান। পাশাপাশি নতুন করে ডিজি থেকে তাইয়িবুন্নাহারের বিষয় কোর্ড পরিবর্তন করে কলেজে চিঠি প্রেরণ এবং একই সময়ে দীপ্তির এমপিও’র সুপারিশ নিয়ে এজেন্ডাসহ কয়েকটি বিষয় একই সুতায় গাঁথা বলে মনে করা হচ্ছে।

এপ্রসংগে কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রভাষক তাইয়িবুন্নাহারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুযায়ী শিক্ষামন্ত্রনালয়ের নির্দেশনায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরে (কলেজ পর্যায়ে) নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বলা হয়,নতুন করে ১১ বিষয়ে কলেজ শিক্ষকরা এমপিও পাবেন। এতে আরো বলা হয়,শিক্ষাক্রমের আলোকে বিষয় পরিবর্তন হলেও কর্মরত কোন এমপিওভূক্ত শিক্ষকের চাকরি যাবেনা বা এমপিও বাতিল হবেনা। তবে তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে কতৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষাক্রম-২০১২’র আলোকে উক্ত ১১ বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া মাউশির মাধ্যমিক পর্যায়ের উপপরিচালক ড.সাধন কুমার বিশ্বাসের ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবরের এক পত্রানুযায়ী বলা হয়,ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে কোন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নিয়োগ-যোগদান এর ভিত্তিতে প্যাটার্ণভুক্ত পদসমূহ পূরণ করার পর এমপিওভূক্ত ও উদ্বৃত্ত কোন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ঐপদের অনুরুপ হলে তাকে ঐ পদে সমন্বয় করতে হবে। এর আলোকেই মূলত তার এমপিও হয়।
পরিচালনা পরিষদের সদস্য শেখ দীন মাহমুদ জানান,দীপ্তি দত্ত কলেজ থেকে ছুটি না নিয়েই বিভিন্ন সময় মাসের পর মাস কলেজে অনুপস্থিত থাকেন পরিচালনা পরিষদের সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হলে তিনি এনিয়ে কথা বললে অধ্যক্ষ বিষয়টি স্বীকার করেন।
এব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ হাবিবুল্ল্যাাহ বাহারের নিকট জানতে চাইলে তিনি মূল বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন,সব কিছুই নিয়ম মাফিক ও পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমেই করা হচ্ছে।
সর্বশেষ সঠিক পন্থা অনুসরণ না করে নিয়োগ দেওয়া ভূয়া সনদধারী শিক্ষক দীপ্তি দত্তের এমপিও’র সুপারিশের অন্তরালে বিশেষ কোন বিষয় লুকিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি শিক্ষানুরাগী সচেতন এলাকাবাসী। এব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তারা সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here