ওসিকে বাঁচাতে এসপির চিঠি, নুসরাতের পরিবার বলছে ‘কূটচাল’

0
247

খবর৭১ঃ আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবারের ওপর দোষারোপ করলেন ফেনী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে জেলার সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনও রাফির পরিবারকেই এ ঘটনার জন্য দায়ি করেছিলেন। উভয়ের অভিযোগ, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তার পরিবার মামলা দায়েরে ‘বিলম্ব’ করেছে।

পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো এক চিঠিতে এসপি এ জাহাঙ্গীর এমন অভিযোগ করেন। তবে নুসরাতের পরিবারের দাবি, ওসিকে বাঁচানোর কৌশল হিসেবেই তাদের ওপর দায় চাপাতে চাইছেন এসপি।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল এ নিয়ে এসপি জাহাঙ্গীর আলম একটি প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতর, বিশেষ শাখা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির দফতরে পাঠান।

ওই চিঠিতে এসপি দাবি করেন, ঘটনার দিন (গত ৬ এপ্রিল) নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার পর পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ ও মাদ্রাসার কর্মচারীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এর পর পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও মামলা দায়েরে অনীহা দেখায় নুসরাতের পরিবার। নুসরাতের চাচাকে বাদী করে পুলিশ মামলা করতে গেলে তাতে বাধা দেয় ভাই মাহমুদুল হাসান। এমনকি তিনি মামলার এজাহারও বদল করেন।

এদিকে এসপির এমন প্রতিবেদনের পর নুসরাতের পরিবার বলছে, ঘটনাটি শুনে যে কেউ মনে করবে নুসরাত হয়তো নিজে থেকেই মাদরাসার ছাদে গিয়েছিল। অথচ তাকে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়েছিল।

একইসঙ্গে এসপির চিঠি ওসিকে বাঁচানোর কূটচাল উল্লেখ করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থেকে ওসি বলে আসছেন শ্লীলতাহানির অভিযোগ বানোয়াট। এমনকি ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া ঘণ্টা দেড়েক আগেও ওই মাদরাসার ইংরেজির প্রভাষক আফছারউদ্দীন মামলা তুলে নেয়ার চাপ দেন। আগুন দেয়ার পরদিনও ওসি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেন।

নুসরাতের ভাই গণমাধ্যমকে আরও বলেন, ৬ এপ্রিল রাতে সোনাগাজীর পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে তার বোনের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়ে পরিবারকে পড়ে শুনিয়েছিল। কিন্তু মামলার এজাহারে সেই সাক্ষাৎকারের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে আগুন দেয়া ও মূল আসামিদের নামও বাদ দেয়া হয়েছে।

তবে নুসরাতের পরিবারের এসব দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি এসপি জাহাঙ্গীর আলম।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম পরীক্ষা চলাকালে মাদরাসা ভবনের ছাদে মুখোশধারী ৪ জন মিলে আগুনে ঝলসে দেয় নুসরাতের শরীর। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে ও পরে নুসরাতকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন নুসরাত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here