বাগদার পোনার ৭৫ হাজার টাকার সুদ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা

0
344

সেলিম হায়দার,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার তালায় পিতার মৃতুর পর বাগদা পোনার ৭৫ হাজার টাকার সুদসহ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে এতিম সন্তানকে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ২১ জুলাই শনিবার রাতে উপজেলার জিয়ালানলতা শেখের হাট এলাকায়। অভিযুক্ত ব্যক্তি তালা উপজেলার আটারই গ্রামের মৃত মোঃ জহর আলী জোয়াদ্দারের ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব জালাল জোয়াদ্দার। শালিশী বৈঠকে উপস্থিত ৭/৮ সদস্যের মধ্যে অনেকেই পাতানো শালিশ বলে মন্তব্য করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সুত্রে জানান, তালা উপজেলা সদরের মরহুম সিরাজুল ইসলাম একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ঘের ব্যবসায়ী ছিলো। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে খুলনা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেল প্রতিপক্ষ বোমা মেরে তাকে হত্যা করে এবং এই হত্যা মামলার ১ নং আসামী তালা উপজেলার আটারই গ্রামের মৃত মোঃ জহর আলী জোয়াদ্দারের ছেলে ঘের ব্যবসায়ী জালাল জোয়াদ্দার। এলাকাবাসী আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে গুনঞ্জন চলে আসছে। হঠাৎ শনিবার রাতে ৭/৮ জন ব্যক্তিকে নিয়ে উপজেলার শেখের হাট নামক বাজারে জিয়ালা নলতা গ্রামের নন্দ লাল ঘোষকে সভাপতি করে এক গ্রাম্য শালিশী বৈঠক বসে। শালিশী বৈঠকে জিয়ালা গ্রামের মকবুল হোসেন পাড়, জিয়ালা ঘোষপাড়ার স্বদেশ ঘোষ, খিতিষ ঘোষ, অরুন ঘোষ, কার্ত্তিক ঘোষ এবং আটারই গ্রামের হায়দার আলী মোড়ল সহ ৩০/৩৫ জন গন্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে শালিশী বৈঠক রাত ৯টা থেকে শুরু করে রাত ১টা পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘন্টা আলোচনা চলে। একপর্যায় সভাপতি ছাড়া স্বদেশ ঘোষ নেতৃত্বে ৫ জন উঠে গিয়ে গোপন বৈঠক করে স্বদেশ ঘোষ সোহেলকে বলে, তোমার বাবার এবং আমরা এক সাথে ব্যবসা, উঠাবসা চলাফেরা করেছি। তুমি আমাদের ছেলের বয়সি আমরা যা শালিশ করবো তা উভয় পক্ষ মেনে নিতে হবে। সকলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রস্তাবটি মেয়ে নেয় সোহেল রানা। এসময় স্বদেশ ঘোষ জানায়, তোমার বাবার রেখে যাওয়া ঋণের টাকা হিসাব নিকাষ করে ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা হয়েছে। সন্তান হিসাবে এই টাকা তোমাকে পরিশোধ করতে হবে এবং সেটি বাধ্যতা মূলক। এসময় অত্র শালিশের সভাপতি নন্দলাল ঘোষ সিদ্ধান্তটি না মেনে এটা কোন শালিশ না বলে চলে যায়। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ জালাল জোয়াদ্দার ও স্বদেশ ঘোষের পাতানো শালিশের সিদ্ধান্তকে ধিক্কার দিয়ে প্রশাসনের  কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
এব্যাপারে সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা জানায়, বাবার মৃত্যুর পর তার ব্যবহৃত ডায়েরীতে লেখা বাগদার পোনা বাবদ মোঃ আনোয়ার হোসেন (আনু) ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাবে। সেই সুবাদে মরহুম পিতার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ছেলে সোহেল রানা আনু মিয়ার কাছে বিষয়টি জানায়। এসময় আনু মিয়া ৭৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে বাকী ৭৫ হাজার টাকা জালাল জোয়াদ্দারের নামে খাতায় লিখে দিয়ে তাকে দিতে বলে। একই দিনে সোহেল রানা জালাল জোয়াদ্দারের সাথে দেখা করে তার পাওনা ৭৫ হাজার টাকা বুঝে নিতে বলে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে সন্তান সোহেল রানা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে মরিয়া হয়ে মাঝে মধ্যে বিষয়টি তাকে অবহিত করলেও কোন কর্ণপাত করেনি। সম্প্রতি কিছু লোকজন ডেকে নিয়ে শালিশী বৈঠক এর নামে গোপন বৈঠক বসিয়ে ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা জোরপূর্বক পরিশোধ করতে বাধ্য করে। তখন আক্ষেপ করে সোহেল রানা জানায়, বাবাকে হত্যা করে খ্যান্ত না হয়ে এখন আমার মত একজন এতিম সন্তানকে আর্থিক হত্যা করছে। এটাই কি সমাজের বিচার! তিনি এহেন কর্মকান্ডের বিচার দাবী করেছেন।
উপস্থিত শালিশী সভাপতি নন্দলাল ঘোষ জানান, জালাল জোয়াদ্দার শনিবার সকালে আমার বাড়ী উপস্থিত হয়ে বলে সন্ধায় বাজারে সোহেল এর সাথে লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বসাবসি আছে আপনি থাকবেন। যথা সময়ে উপস্থিত হই এবং আমাকে সভাপতি করে ৭ সদস্যের একটি মুল টিম গঠন করে ।এসময় আরও ৩০/৩৫ জন গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলো। শালিশে কথাবার্তা বলার একপর্যায় স্বদেশ ঘোষ সহ ৫ জন উঠে অন্যত্র গিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে এসে আমাকে না জানিয়ে স্বদেশ ঘোষ ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা সোহেল জালাল জোয়াদ্দারকে দিবে। সিদ্ধান্তটি আমার পরিকল্পিত মনে হওয়ায় শালিশ না মেনে আমি চলে আসি।
এব্যাপারে জালাল জোদ্দার জানায়, ১৪ বছর আগে ৭৫ হাজার টাকা যদি ফেরত পেতাম তাহলে ২বিঘা জমি কিনলে এর চেয়ে বেশী লাভ হতো। আপনারা যেটি সত্য সেটি লেখেন।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here