এশিয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে মৃত্যু কমছে ইউরোপে

0
381
সৈয়দপুরে ইসলামী ব্যাংকের আরো তিনজন করোনায় আক্রান্ত

খবর৭১ঃ ইউরোপে করোনায় মৃত্যুহার কমলেও এশিয়ায় হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। প্রতিদিন হাজারও নতুন রোগী যোগ হচ্ছে এ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে। এতে দুর্বল চিকিৎসাসেবার দেশগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

ইতোমধ্যে এশিয়ার ৪৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৬২ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন সাড়ে ২১ হাজার। অপরদিকে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাওয়ায় ইউরোপের অনেক দেশ ইতোমধ্যে লকডাউন শিথিল করেছে।

অনেকে কড়াকড়ি তুলে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একদিনে সংক্রমিত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৬০ জন।

শুক্রবার সংক্রমিত হয়েছেন ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ, বৃহস্পতিবার ছিল ৯৬ হাজারের ওপরে। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭২ জন। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একদিনে ২৬৯৬ জন মারা গেছেন।

শুক্রবার মারা গেছেন সাড়ে ৫ হাজার। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ লাখ ৭২ হাজার ৫৫১ জন। মারা গেছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৭২ জন।

অবস্থা আশঙ্কাজনক ৪৭ হাজার ৭৬৮ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫২ জন। যুক্তরাষ্ট্রে শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একদিনে ৭২০ জন মারা গেছেন। শুক্রবার মারা গেছেন ১ হাজার ৬৮৭ জন।

দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ২২৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৩৫ জনের। স্পেনে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৩ জন, মারা গেছেন ২৬ হাজার ৪৭৮ জন।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একদিনে ১৭৯ জন মারা গেছেন। শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২২৯ জনের। ইতালিতে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ১৮ হাজার ২৬৮, মারা গেছেন ৩০ হাজার ৩৯৫ জন। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একদিনে ১৯৪ জন মারা গেছেন।

শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৪৩ জনের।

যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ১৫ হাজার ২৬০ জন, মারা গেছেন ৩১ হাজার ৫৮৭ জন। শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একদিনে ৩৪৬ জন মারা গেছেন। শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৬২৬ জনের।

ফ্রান্সে মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৯ জন, মারা গেছেন ২৬ হাজার ২৩০ জন। শুক্রবার দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৪৩ জনের। রাশিয়ায় মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৭৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮২৭ জনের।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একদিনে ১০৪ জন মারা গেছেন। শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। ইউরোপে সবার আগে লকডাউনে গিয়েছিল ইতালি। আবার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাওয়ায় সবার আগে কাজেও ফিরল তারা।

গত সপ্তাহ থেকে দেশটিতে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন নির্মাণ আর কারখানা শ্রমিকরা। খুলে দেয়া হয়েছে পার্ক, রেস্তোরাঁ আর পাইকারি দোকানও। ফ্রান্সে আগামীকাল সোমবার থেকে শর্তসাপেক্ষে লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড ফিলিপ জানিয়েছেন, এখন থেকে ঘরের বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ১৩৫ ইউরো জরিমানা করা হবে।

জার্মানির ৮৪ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় লকডাউনের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

স্পেনে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে আসায় লকডাউন শিথিল করেছে দেশটি। বেলজিয়ামে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগামীকাল সোমবার থেকে খুলে দেয়া হবে।

ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে (২ মে) ভারতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৩৩৬, এখন তা ৬৩ হাজার ছাড়িয়েছে।

ওই সময় পাকিস্তানে ছিল ১৮ হাজার ১১৪, এখন তা ২৯ হাজারের বেশি। ফিলিপাইনে ছিল ৯ হাজার, এখন ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়ায় ছিল প্রায় ১০ হাজার, এখন ১৩ হাজার পেরিয়ে গেছে।

আফগানিস্তানে ছিল ২ হাজার ১৭১, এখন রোগী ৪ হাজার ছুঁইছুঁই। বর্তমানে এশিয়ার ৪৯টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দেশ ও অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৬২ হাজার ১৬৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৬১৮ জনের।

এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- তুরস্ক ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৯ জন, ইরান ১ লাখ ৬ হাজার ২২০, চীনে ৮২ হাজার ৮৮৭, ভারতে ৫৯ হাজার ৮৮১, সৌদি আরবে ৩৫ হাজার ৪৩২, পাকিস্তানে ২৭ হাজার ৪৭৪, সিঙ্গাপুরে ২২ হাজার ৪৬০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ইরানে ৬ হাজার ৫৮৯ জন, তারপর চীনে ৪ হাজার ৬৩৩ জন।

ভ্যাকসিন ছাড়াই করোনা বিদায় নেবে -ট্রাম্প : এ বছরের শেষদিকে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করবে যুক্তরাষ্ট্র- ডাক্তারদের সঙ্গে কথা না বলেই কয়েক দিন আগে দৃঢ়কণ্ঠে এ দাবি জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এবার ‘ডাক্তারদের কথায় আস্থা রেখে’ ট্রাম্পের দাবি, ভ্যাকসিন ছাড়াই করোনাভাইরাস বিদায় নেবে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনা দূর করতে ভ্যাকসিন লাগবে না। আপনাআপনিই বিদায় নেবে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস।

ট্রাম্প আরও বলেন, ডাক্তাররা যা বলেছেন, আমি শুধু তাতে আস্থা রেখেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, করোনা বিদায় নিতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কিছু ভাইরাস কিংবা ফ্লু এসেছিল যেগুলোর জন্য ভ্যাকসিন খোঁজা হচ্ছিল। ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি।

কিন্তু তারপরও তারা (ভাইরাস) গায়েব হয়ে গেছে, আর কখনও দেখা দেয়নি।

হোয়াইট হাউসে আরও দু’জন আক্রান্ত : ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রেস সেক্রেটারি কেটি মিলার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কেটি মিলার ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারের স্ত্রী।

তিনি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে কর্মরত। তাই এ সংক্রমণ হোয়াইট হাউসের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সহকারীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি ট্রাম্পকন্যার আশপাশে ছিলেন না।

তারপরও ইভানকা ও তার স্বামী জেয়ার্ড কুশনারের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দু’জনেরই নেগেটিভ এসেছে।

কোয়ারেন্টিনে মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের প্রধান : করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ হওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ায় ১৪ দিনের জন্য স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে গেলেন মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) প্রধান স্টিফেন হান।

প্রশাসনের মুখপাত্র মাইকেল ফেলবারবাউম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মস্কোয় লকডাউন বেড়েছে : টানা ষষ্ঠ দিন রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। মহামারীর নতুন হটস্পট হতে যাচ্ছে দেশটি। এ অবস্থায় রাজধানী মস্কোয় লকডাউন পুরো মে মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র : করোনা মহামারী রুখতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব পাসের ভোট আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের সঙ্গে বিরোধের জেরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

মার্চ থেকে এ প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে নিরাপত্তা পরিষদ। যেসব দেশ ও অঞ্চলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে, তা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার আহ্বান জানাতে এ প্রস্তাব পরিষদে উত্থাপনের কথা ছিল শুক্রবার।

এ প্রস্তাব ভোটে পাস হতো; কিন্তু তা উত্থাপনের আগেই আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবটি পাস হলে সিরিয়া-ইয়েমেনের মতো দেশের সরকার করোনার চিকিৎসাসেবায় মন দিতে পারত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here