এলাকায় মাদক সেবন বাঁধা দেয়ায় সৈয়দপুরে দুই রেলওয়ে কর্মচারীর বাড়িতে বখাটেদের দফায় দফায় হামলা; আহত ৩

0
600
এলাকায় মাদক সেবন বাঁধা দেয়ায় সৈয়দপুরে দুই রেলওয়ে কর্মচারীর বাড়িতে বখাটেদের দফায় দফায় হামলা; আহত ৩
ছবিঃ মিজানুর রহমান মিলন , সৈয়দপুর থেকে।

খবর৭১ঃ

মিজানুর রহমান মিলন , সৈয়দপুর থেকেঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে হাতিখানা মাছুয়া পাড়ায় বাড়ির পাশে বখাটেপনা ও মাদকসেবন করতে নিষেধ করায় চার মাদকসেবীর নেতৃত্বে ওই এলাকার দুটি বাড়িতে কয়েক দফা হামলা চালানো হয়েছে। এসময় মাদকসেবী বখাটের দল বাড়ি দুটির গ্রীলের দরজা, জানাজা ও ঘরের টিনের বেড়াসহ জিনিসপত্র ভাংচুর ও এবং লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ সময় হামলাকারীদের ধাঁরালো ছুরিকাঘাতে গৃহকর্তা ফকিরা দাসসহ তাঁর তিন ছেলে মাথায় মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তারা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সৈয়দপুর পৌর এলাকার হাতিখানা মাছুয়াপাড়ায় সোমবার দুুুপুরে এবং আগের দিন গত রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানা একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে হামলাকারীরা ওই দুই পরিবারের সদস্যদের বার বার জীবননাশসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে করে ওই এলাকার ৩০/৪০টি সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।

বখাটেদের হামলার ভয়ে তারা দিনের বেলাতেও তাদের বাড়ি-ঘরের দরজা-জানাজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছেন। অভিযোগে জানা গেছে, সৈয়দপুর পৌরসভার উল্লিখিত এলাকার বাসিন্দা সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মচারি শ্রী গুরুচরণ দাস (৫২) এবং তাঁর কাকা ফকিরা দাস (৫৯) পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ শহরের হাতিখানা মাছুয়াপাড়া বসবাস করে আসছেন। সেখানে উল্লিখিত দুইটি পরিবারর ছাড়াও আরো প্রায় ৩০/৪০টি হিন্দু পরিবারের বসবাস। যাদের বেশিভাগই মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার দিন গত রবিবার সন্ধ্যায় আনুমানিক সাড়ে ৭ টার দিকে চার চিহৃিত বখাটে ও মাদকসেবী গৌতম (২২), রানা (২৪) সবুজ (২৩) ও রনি (২০) ওই এলাকায় এসে গুরুচরণ দাসের বাড়ির সংলগ্ন একটি বন্ধ থাকা দোকানের সামনে এসে প্রকাশ্যে মাদকসেবন করে উচ্ছৃংখল আচরণ ও অশ্লীল কথাবার্তা বলছিল।

আর এ সময় পাশের গুরুচরণ দাসের বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী শ্রী গোলাপ দাস (২৯) মাদক সেবীদের উচ্ছৃংখল আচরণ করতে নিষেধ করলে তাদের মধ্যে তুমুল বাকবিন্ডার শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে চার মাদকসেবী নানা রকম হুমকি-ধমকি দিয়ে সেখানে থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে ওই চার মাদকসেবীর নেতৃত্বে ১০/১৫ জন সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় বিভিন্ন ধাঁরালো অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গুরুচরণ দাস ও ফকিরা দাসের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা ওই দুইটি বাড়ির গ্রীলের দরজা- -জানালা ও টিনের বেড়া এবং ঘরে থাকা আসবাবপত্র, টিভিসহ অন্যান্য মালামাল ভাংচুর ও লুটপাট করে। এতে বাঁধা দিতে গেলে হামলাকারীরা বাড়ির সদস্যদের ওপর ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

এতে গৃহকর্তা ফকিরা দাস (৫৯) এবং তাঁর দুই ছেলে প্রদীপ দাস (৩৫), পবিত্র দাস (৩০) হাতে ও মাথায় মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে আশপাশের লোকজন তাদের দ্রুত উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি গিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি হওয়া তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের সকলের হাতে ও মাথায় ৬/৭ সেলাই করতে হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় গত রবিবার রাতে সৈয়দপুর থানায় মৌখিক ও সোমবার সকালে লিখিত অভিযোগ করা হয়। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদকসেবীরা গত সোমবার দুপুরে আবারও গুরুচরণ দাস ও ফকিরা দাসের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা করে পরিবারের সদস্যদের বেদম মারপিট করে।

এ সময় বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরিণতি ভালো খারাপ হবে না বলে শাসিয়ে চলে যায়। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সৈয়দপুর পৌরসভা ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আল- মামুন সরকার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সলর মো. আজগার আলী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর কণিকা রানী সরকার ঘটনাস্থল গিয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও দুই পরিবারের ওপর মাদক সেবীদের হামলার বিষয়টি আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত জানতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গোটা এলাকায় সুনশান নীরবতা। বাড়ি বাইরে কোন লোকজন নেই।

এলাকার সকল বাড়িঘরের দরজা জানাজা বন্ধ। গোটা এলাকার থমথমে অবস্থা। পরে এলাকায় সাংবাদিক এসেছে জেনে দুই একজন করে বাড়ির বাইরে এসে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দেন। তবে অনেকেই মাদকসেবীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি। হামলার শিকার গুরুচরণ দাস অভিযোগ করেন, গত সোমবার সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে তাদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করা হয়। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় তৎক্ষণাৎ পুলিশ পদক্ষেপ নিলে তারা আর দ্বিতীয় দফা হামলা করার সাহস দেখাতো না। পুলিশের তৎপরতা না থাকায় তারা দফায় দফায় হামলা চালায়।

এছাড়াও তারা আমাদের নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খানের সাথে কথা হলে ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান ওই এলাকায় একজন পুলিশ অফিসারকে সার্বক্ষণিক অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছেন।

সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল বলেন,ঘটনাটি আমি শুনেছি। বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাব। ঘটনার বিষয়ে সৈয়দপুর থানা ওসিকে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here