এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ কি রাশিয়ার জন্মহার বাড়াবে?

0
280

খবর৭১:রাশিয়ায় শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের আসরটি শেষ হবে ১৫ জুলাই। আর এ নিয়ে অনেকের পাশাপাশি আগ্রহী থাকবেন দেশটির রাশিয়ার জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরাও। কিন্তু তাদের বিশেষভাবে আগ্রহী হওয়ার কারণ কী?

বিশ্বকাপ আয়োজনকারী দেশের শিশু জন্মহারে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসে কিনা সেদিকে নজর রাখবেন তারা। বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, খেলাধূলায় সাফল্যের সাথে জন্মহার বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক রয়েছে।

রাশিয়ার জন্য এটি সুখবর হতেও পারে। ১৯৯২ সাল থেকে রাশিয়ার জন্মহার কমছে। বাড়ছে মৃত্যুহার। কয়েকটি গবেষণায় এমনও ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৩০ লাখ থেকে ২০৫০ সালে ১১ কোটি ১০ লাখ হবে। উচ্চ মৃত্যুহার, নিম্ন জন্মহার ও জীবনযাপনের নিম্নমানের জন্য জনসংখ্যায় হ্রাস ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়ার জন্মহার হাজারে ১৩ জন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশের চেয়ে তা বেশি। তবে ১৯৬০ সালের সাথে তুলনা করলে এই জন্মহার প্রায় অর্ধেক। অধিকাংশ দেশেই জন্মহার পতনের মাত্রা এত বেশি ছিল না।

এই সমস্যা নিয়ে ক্রেমলিনও বেশ চিন্তিত। গত বছর নভেম্বরে জন্মহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার প্রকল্প চালু করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করা হয়, যেখানে অন্যতম প্রধান প্রস্তাব ছিল- সেসব পরিবারের সদ্যজাত শিশুর প্রথম ১৮ মাসের ভরণপোষণ রাষ্ট্র বহন করবে।

কিন্তু ফুটবল কি সত্যিই ভূমিকা রাখতে পারবে?

যুক্তরাজ্য ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল যে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয় ও আয়োজনের কারণে সেখানে জন্মহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৭ সালে।

২০০৬ বিশ্বকাপের নয় মাস পর জার্মানির হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানানো হয়, জার্মানির জন্মহার ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

জার্মান গণমাধ্যমকে ধাত্রীবিদ্যাবিশারদ রল্ফ ক্লিশ বলেন, ‘সুখের অনুভূতি বিশেষ ধরনেরর হরমোন নির্গমন ঘটায় এবং গর্ভধারণে সহায়তা করে। অনেক মানুষই বিশ্বকাপের মত ইভেন্টের সময় দারুণ উত্তেজিত থাকেন এবং এই উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে।’

ব্রাজিলের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চে ব্রাজিলের শিশু জন্মহার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে আগের বছরের তুলনায় জন্মহার প্রায় সাত ভাগ বেড়েছে।

জন্মহার বৃদ্ধিতে ফুটবলের ভূমিকা পরিমাপ করতে একটি পুরো টুর্নামেন্টও প্রয়োজন হয় না। ২০১৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল তাদের এক গবেষণায় ‘জেনারেশন ইনিয়েস্তা’ শব্দটি ব্যবহার করে তা ব্যাখ্যা করে।

২০০৯ এর মে মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের শেষদিকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার এক গোলে চেলসিকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বার্সেলোনা। এর নয় মাস পর ২০১০ এর ফেব্রুয়ারিতে কাতালোনিয়ার হাসপাতালগুলোতে ১৬% পর্যন্ত জন্মহার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

ফুটবলে সাফল্যের সাথে জন্মহার বৃদ্ধির এই সম্পর্ক ইতালিতেও স্বীকৃত। ২০১৮-১৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে এএস রোমা হারিয়ে দেয়। এরপর এএস রোমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অনেকটা হাস্যরসাত্মকভাবেই ক্লাবের নিজেদের শিশুপণ্যের বিজ্ঞাপণ দেয়া হয়।

ঐ টুইটে লেখা হয়েছিল, ‘নয় মাসের মধ্যে এগুলো হয়তো বিক্রি করার সুযোগ পাবো আমরা।’

একটি ম্যাচ থেকে লাভবান হয়েছিল আইসল্যান্ডও। বিশ্বকাপে বাছাই হওয়া ক্ষুদ্রতম দেশ ২০১৬ সালের জুনে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়। ঐ টুর্নামেন্ট দেখতে গিয়েছিল আইসল্যান্ডের প্রায় ২৭ হাজার মানুষ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ।

নয় মাস পর আইসল্যান্ডের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তাদের দেশে রেকর্ড পরিমাণ শিশু জন্ম নেয়। ২০১৮ বিশ্বকাপেও আইসল্যান্ডের জনসংখ্যার ওপর একই ধরনের প্রভাব দেখা যেতে পারে। আইসল্যান্ড এরই মধ্যে তাদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার সাথে ড্র করে দারুণভাবে আসর শুরু করেছে।

এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে নিচের র‍্যাঙ্কিংয়ের দেশ স্বাগতিক রাশিয়া। তবে সৌদি আরব আর মিসরকে হারিয়ে এরই মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড প্রায় নিশ্চিত করা রুশরা আগামী বছর জন্মহারে ব্যাপক উন্নতি আশা করতেই পারে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here