এনবিআরের সার্ভার হ্যাকিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে

0
298

খবর৭১ঃজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভার হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি। এটা আগেও হয়েছে। আজ অফিসে গিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেটা আমরা দেখব।’

প্রসঙ্গত এনবিআরের সার্ভারে হ্যাকিংয়ের ঘটনা তুলে ধরে প্রথমে ১৭ জানুয়ারি এবং বুধবার দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কাস্টম কর্মকর্তাদের সরকারি আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র তিন বছরের বেশি সময় ধরে এই সার্ভারের অবৈধ ব্যবহার করেছে। এ সময় চক্রটি শত শত কোটি টাকার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করে নিয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, আগে থেকেই আমাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল। ওই এলাকাকে তো তারকাঁটার বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দূর থেকে আইডি কার্ড ইউজ করতে পারবে না। সার্ভারে ঢুকতে হলে ভেতরে যেতে হবে। আমার মনে হয়, সার্ভার আরও অনেক বেশি সংরক্ষিত হওয়া দরকার। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘টেকনোলজি যত ডেভেলপ করবে, এই বিপদগুলো তত থেকে যাবে। আমরা টেকনোলজি বাড়াচ্ছি; কিন্তু এগুলোর সেফটি-সিকিউরিটি বাড়াচ্ছি না। প্রত্যেকটির পেছনে একাধিক ফায়ারওয়াল রাখতে হবে। একটা ভাঙতে পারলে আরেকটা যাতে ভাঙতে না পারে। আমরা যেন সিকিউরড থাকি। ওই ওয়ালগুলো আমাদের তৈরি করতে হবে।’

প্রসঙ্গত ওই চক্রটি এনবিআরের সার্ভারে প্রবেশ করে ২০১৬ সাল থেকে ৩ হাজার ৭৭৭ বার লগইন করেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক তদন্তে ধরা পড়েছে। এছাড়া চিঠিও জাল করা হয়েছে। আর এতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার পর তার শুল্কায়ন থেকে শুরু করে সবকিছুই হয় এনবিআরের ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম’ নামের একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। দেশের সব বন্দর এই সফটওয়্যারের আওতায় কাজ করে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় কাকরাইলে এনবিআরের কার্যালয় থেকে। কোনো চালান ছাড়তে না চাইলে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেটা বন্ধ করারও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা আছে।

শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিপুল পরিমাণ পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়েছে। এমন খবরে তারা আমদানি করা ২২টি কনটেইনার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ছাড় করানো বন্ধ (লক) করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেই কনটেইনারগুলো নামমাত্র শুল্ক দিয়ে ছাড় করানো হয়েছে।

কারণ খুঁজতে গিয়ে কর্মকর্তারা দেখতে পান, রাজস্ব বোর্ডের সফটওয়্যার থেকেই এসব চালান ছাড় করে দেয়া হয়েছে। আর এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে দু’জন কাস্টম কর্মকর্তার আইডি ও পাসওয়ার্ড। কিন্তু এই দুই কর্মকর্তার কেউই বন্দরে কর্মরত নেই। পরে তারা জানতে পারেন, তিন বছরে এই আইডি দুটি পণ্য খালাসের জন্য অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ৩ হাজার ৭৭৭ বার অবৈধভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

যে দুই কর্মকর্তার নামে আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে পণ্য খালাস করা হয়েছে, তারা হলেন ডিএএম মহিবুল ইসলাম ও ফজলুল হক। মহিবুল ইসলাম ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে চাকরি শেষে অবসরে যান।

২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেড় বছর তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে ছিলেন। আর ফজলুল হক ২০০৯ সাল থেকে মাঝে এক বছর বাদে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত ছিলেন।

নিয়ম অনুসারে, একজন কর্মকর্তা বন্দরে নিয়োগের পর পদ ও দায়িত্ব বিবেচনা করে তার নামে আইডি ও পাসওয়ার্ড তৈরি করে দেয়া হয়। আর কর্মকর্তারা কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় লিখিতভাবে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে সেই আইডি বন্ধ করে দেয়া হয়।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here