‘এনআরসিতে বাদ পড়াদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সাথে কথা বলা হবে’ঃ আসামের অর্থমন্ত্রী

0
581
এনআরসিতে বাদ পড়াদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সাথে কথা বলা হবে

খবর৭১ঃ

আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষদের ‘বিদেশি ট্রাইব্যুনাল’ এর চূড়ান্ত রায়ের পর সেইসব বিদেশিদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সাথে ভারত কথা বলবে। ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে হিমন্ত এই মন্তব্য করেন।

‘ওয়ার্ক পারমিট’ ব্যবহার করে বিদেশি হিসাবে ঘোষিত নাগরিকদের সমস্যা মোকাবিলা করা হবে কি না? সেই প্রশ্নের উত্তরে হিমন্ত বিশ্ব বলেন, ‘একেবারেই নয়। বিদেশি হিসাবে ঘোষিত নাগরিকরা কিছু অধিকার ভোগ করেন কিন্তু একজন প্রকৃত নাগরিকের মতো সমস্ত সুযোগ-সুবিধা তারা পান না। চূড়ান্ত রায়ের (বিদেশি ট্রাইব্যুনাল) পর আমরা বাংলাদেশে সাথে আলোচনা করবো যাতে যে সব বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছেন, তাদের তারা ফেরত নেয়। বাংলাদেশ ও ভারত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। যদিও নিয়মিত প্রক্রিয়ায় ১০০ বা ১৫০ মানুষকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে কিন্তু এনআরসি থেকে বাদ পড়া ব্যক্তির সংখ্যা তার থেকে কয়েকগুন বেশি হবে। তবে যেভাবেই হোক ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের সাথে আলোচনা করে তাদের বাসিন্দাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যদি তারা তা ফেরত নয়, তবে আমাদেরই তার সমাধান সূত্র বের করতে হবে। কিন্তু আমি বলবো এদের জন্য কোন ডিটেনশন ক্যম্প স্থাপন করা হবে না।’

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগষ্ট আসামে প্রকাশিত এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়েছে ৩ কোটির কিছু বেশি নাম। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখের বেশি নাম। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরই রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেছে। তালিকা নিয়ে কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলি যেমন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তেমনি কেন্দ্র ও আসামের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিও মনে করছে প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি রয়ে গেছে। যদিও চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকা ব্যক্তিরা পুনরায় ‘ফরেনারস ট্রাইবুন্যাল’-এ আবেদনের সুযোগ পাবেন। এজন্য রাজ্যটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘ট্রাইব্যুনাল’ও স্থাপন করা হয়েছে।

হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিমসহ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের বাদ পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে হিমন্ত বলেন ‘আসল ভুলের কারণেই বহু হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিমদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাদের সুবিধার জন্য রাজ্য জুড়ে ১৬০ টি ‘বিদেশি ট্রাইব্যুনাল’ এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ২০০ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। তার অভিমত, তালিকা থেকে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের বাদ পড়ার চেয়ে ভুয়া নথি দিয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আমাদের কাছে বেশি উদ্বেগের।

কোন কোন জেলায় এনআরসি সঠিক ভাবে কাজ করেনি এবং তার কারণ কি? এই প্রশ্নের উত্তরে আসামের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, ধুবড়ি এবং দক্ষিণ সালমারা সীমান্ত জেলাগুলিতে এনআরসি সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশি ভুল-ভ্রান্তির ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের সন্দেহ। এটা খুবই আশ্চর্যের যে সীমান্ত জেলাগুলিতে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৬ শতাংশ এবং সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত জেলাগুলিতে বাদ পড়ার শতকরা হার ১৬ শতাংশ। কেন্দ্র সরকার ও আসাম রাজ্য সরকার-উভয়েই সীমান্ত এলাকাগুলতে কম করে ২০ শতাংশ রি-ভেরিফিকেশন ও বাকি জেলাগুলিতে ১০ শতাংশ রি-ভেরিফিকেশন করার বিষয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্ত হবে। পুলিশ তদন্তেই জানা গেছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ভুয়া সনদ চক্রের রমরমা চলছে। এমন অনেক জেলা আছে যেখানে ৬ শতাংশ মানুষ অবৈধ ভাবে বসবাস করছে কিন্তু সেখানে মাত্র ২ শতাংশ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অবৈধ বসবাসকারী মানুষের শতকরা ভাগ ২০ শতাংশ। আর সেই কারণেই রি-ভেরিফিকেশনের জন্য শীর্ষ আদালতে যাচ্ছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here