এজন্যই কি ডাকসু নির্বাচন হয়েছে?

0
290

খবর৭১ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ফিরে পাবে তার হারানো ঐতিহ্য, শিক্ষার্থীরা পাবে তাদের অধিকার এমন স্বপ্নই বুনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাদের স্বপ্নগুলো ছিল ঠিক এমন- রাজনীতির গণ্ডির বাইরে এসে নিজেকে নিয়ে যাবেন অন্য স্তরে। পড়াশোনা আর গবেষণার মাধ্যমে জাতি পাবে তার পুরনো ঐতিহ্য। সিটের জন্য কারো দ্বারস্থ হতে হবে না, গেস্টরুম নামক মানসিক নির্যাতনের সেল বন্ধ হবে সবসময়ের জন্য। থাকবে না- একই কক্ষে গাদাগাদি করে দুইজনের কক্ষে ৮ জন। উঠে যাবে গণরুম নামক কালচার।

কিন্তু সব যেন গুড়েবালি। স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। ডাকসুর প্রথম কার্যদিবস শুরু হয়েছে গত ২৩ মার্চ। কিন্ত এখনো শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না তাদের চাওয়া পাওয়ার সিকিমাত্র। এমন নানান অভিযোগ উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মুখ থেকে।

ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সাথে কথা বলেছেন এসব অসঙ্গতি নিয়ে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে ডাকসুর কাছে সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল গেস্টরুম-গণরুম প্রথার বিলোপ এবং মেধার ভিত্তিতে সিট প্রদানের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সবকিছু আগের মতই। কোনো ধরনের পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। কিছু দিন গেস্টরুম বন্ধ থাকার পর এখন সেটি আবার শুরু হয়েছে তার পুরনো রূপে। জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রোগ্রামে, না গেলে রুমে ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে তালা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূর্যসেন হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এজন্যই কি ডাকসু নির্বাচন হয়েছে? সবকিছু তো আগের মতই আছে। আমরা ডাকসুর ইতিবাচক পরিবর্তন অন্তত আমাদের ক্ষেত্রে দেখছি না। ভাবছিলাম গেস্টরুম কালচার বন্ধ হবে। কিন্তু বড় ভাইরা বলছে ডাকসু ডাকসুর জায়গায় আর ছাত্রলীগ ছাত্রলীগের জায়গায়। কাজেই এই কালচার অব্যাহত থাকবে। তাহলে কেন আমাদের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে?’

সলিমুল্লাহ হলের আরবি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘থাকি বারান্দায়। তার ওপর আবার প্রতিদিন প্রোগ্রাম করতে হয়। এই সামান্য জায়গায় থাকার কারণে এতো বেশি দায়বদ্ধ আমরা! ভাবছি ডাকসুর মাধ্যমে এসব কিছুর পরির্বতন হবে কিন্তু না।’ তবে সলিমুল্লাহ হলে গেস্টরুমের আধিক্য আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে বলে এই শিক্ষার্থী জানান।

সূর্যসেন হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রোগ্রামে না যাওয়ায় বড় ভাইরা রুমে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। পরে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আরও অনেক হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। এখন তারা কক্ষে অন্যদের তুলে দিয়েছে। আমাদের আরেকটা সংকীর্ণ রুমে শিফট করেছে। ডাকসুর ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আমি চোখে দেখছি না।’

বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যদিও এই হলটিকে বলা হয় অরাজনৈতিক হল। তবে আমাদের বড় ভাইদের অনেক সমীহ করে চলতে হয়। বড় ভাইদের জন্য সিগারেট আনাসহ অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়া গেস্টরুম-গণরুম তো তার পুরনো ধারায় আবারও ফিরতে শুরু করেছে।’

হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, ‘আগে তো ছাত্রলীগ অন্তত কোনো কিছু করতে চিন্তা করত। এখন আর সেটা করা লাগে না। কারণ তারা এখন শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত এবং তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে অনেক কিছু বৈধ করে নিয়েছে। ডাকসু হওয়াতে তারাই উপকৃত হয়েছে।’

এই ব্যাপারে বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘যেহেতু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সব থেকে জুনিয়র। তাই তাদের সিনিয়রদের সাথে কথা-বার্তা বলার একটা নির্দিষ্ট ম্যানার রয়েছে। তারা যাতে সেটা ভালো ভাবে শিখতে পারে সেজন্যই গেস্টরুমের প্রয়োজন এবং আমরা গেস্টরুম নিচ্ছি।’

আবার অনেকে দাবি করছেন, জুনিয়রদের সাথে সিনিয়রদের মেলবন্ধন হিসেবে গেস্টরুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ট্র্যাডিশন এবং দীর্ঘ দিনের ট্রেন হিসেবে কাজ করে আসছে। সেই সুবাদে এটি অব্যাহত থাকবে। ডাকসুর সাথে এটি সাংঘর্ষিক নয় বলেও তারা দাবি করে।

গেস্টরুম কালচার নিয়ে ডাকসুর প্রথম কার্যকরী সভা থেকেই কথা বলে আসছেন ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি প্রথম সভা শেষে দাবি করেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের প্রাণের চাওয়া গেস্টরুম প্রথা উচ্ছেদ এবং গণরুম প্রথা বাতিল করে মেধা ও যোগ্যতার বিবেচনা করে সিট প্রদানের জন্য ডাকসুর সভাপতি এবং আমাদের অভিভাবক ভিসি স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

অপরদিকে গেস্টরুম প্রথা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট কথা বলেনি ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু প্রতিনিধিরা। তাহলে ছাত্রলীগ কী চাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যায়ের হলগুলো থেকে গণরুম গেস্টরুম প্রথা উঠে যাক?- এমন প্রশ্নই শিক্ষার্থীদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here