এখনই সরকার পরিবর্তন চান ড. কামাল

0
264

খবর৭১ঃগণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সরকারের পরিবর্তন এখনই চাই। কারণ এ সরকারের প্রতি জনগণের একটুও আস্থা নেই।

তিনি আরও বলেন, তার বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে সরকার এটা প্রমাণ করতে নির্বাচন দিতে পারে। বুকের পাটা থাকলে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন যে জনগণ এ সরকারের প্রতি আস্থা রয়েছে।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বেশি দিন আন্দোলন হলে ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে দেশের পুরো অর্থনীতিকে চুরমার করে দেবে, আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবে। সুতরাং, আন্দোলন ধীরস্থিরভাবে করা চলবে না। সরকার পরিবর্তন এখনই চাই।

ড. কামাল হোসেন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, এখনই নির্বাচন দেন। আমি বলছি, এই বছরের মধ্যে নির্বাচন দিন। আপনাদের যদি সৎ সাহস থাকে, বুকের পাটা থাকে-এখনই নির্বাচন দিন। সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যে দুই-এক বছরের মধ্যেও নির্বাচন দেয়া যায় যখনই আস্থার একটা চ্যালেঞ্জ হয়।

তিনি বলেন, সরকার যে উন্নয়নের কথা বলে তা আইয়ুব ইয়াহিয়া বলত। এখন এসরকার একই কায়দায় উন্নয়নের সাফাই গাইছে। তাদের মুখে উন্নয়নের এমন কথা আইয়ুব-ইয়াহিয়াকেও ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় আইয়ুব-ইয়াহিয়ার মুখে উন্নয়ন শব্দটিকে ঘৃণার চোখে দেখতেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ৩০ ডিসেম্বরে যা হয়েছে তা কী শব্দ দিয়ে বোঝানো যাবে, জানি না। এটাকে ভুয়া নির্বাচন বললেও কম বলা হবে। নাটকও বলা চলে না। এটা কাল্পনিক নির্বাচন বলা যেতে পারে।

একাদশ সংসদকে কাল্পনিক সংসদ অভিহিত করে তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন ছিল না, এটা একটা কাল্পনিক নির্বাচন ছিল। এখন তথাকথিত সংসদ শোনা যায়। অনেকে সংসদ সংসদ বলেছেন। আমি তো কোনো পার্লামেন্ট আমার চোখের সামনে দেখি না। সংসদ বললেই সংসদ হয় না, নির্বাচিত বললেই নির্বাচিত হয় না।

ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশে যে উন্নয়ন উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে সরকারে মুখ খুলতে হবে। কোথা থেকে কীভাবে কত ঋণ নিয়ে এ ধরনের উন্নয়ন করা হচ্ছে। এসব ঋণের কারণে জাতির ঘাড়ে কত ঋণের বোঝা পড়বে সে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন সবাই।

সরকারকে হুশিয়ারি উচ্চারণ ড. কামাল হোসেন বলেন, আপনারা মনে করবেন না যে, এসব করে আপনারা পার পাবেন। ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে যেভাবে বেঈমানি করা হচ্ছে, যেভাবে তাদের সঙ্গে প্রতারণার করা হচ্ছে- এটা আমি বলব যে, আইয়ুব-ইয়াহিয়াকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। আইয়ুব খান অহংকারের সঙ্গে বলতো আমি চারদিকে উন্নয়ন করে দিচ্ছি। উন্নয়ন শব্দটা আমাদের কাছে, বঙ্গবন্ধুর কাছে ওই সময়ে ঘৃণিত শব্দ হয়েছিল। দেশে যেসব অপচয় হচ্ছে, যেসব জিনিসকে বলা হচ্ছে- উন্নয়ন উন্নয়ন- এটা ঋণের বোঝা আর লুটপাট ছাড়া আর কিছু না।

প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের মুখে বাকশালের প্রশংসা শুনে জনগণ আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠায় আছে।

তিনি বলেন, সরকার এখন দেশ বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। সেই স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যম যে স্বাধীন না তার সে কথাও বলতে পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ আজ একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।

তিনি বলেন, সবাই বলে জাতীয় ঐকফ্রন্টে সংকট আছে। কথায় কথায় বিএনপি আর ঐক্যফ্রন্টে সংকটের কথা বলা হয়। তিনি মঞ্চে উপবিষ্ট নেতাদের দেখিয়ে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট আছে, থাকবে। আরও বৃহত্তর ঐক্য হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে অত্যাচার নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায় তাদেরও অপসারণ করি। জনগণের ঐক্য সৃষ্টি করে সব দলমত-নির্বিশেষে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি। এতে করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে। কারণ খালেদা জিয়া জেলে আছেন, তিনি গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে গিয়ে জেলে গেছেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর ইউনিফর্মধারী প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং সরকার মিলেমিশে দেশের স্বাধীনতাকে লুণ্ঠন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধবংস করে দিয়েছে। অন্যায় অবিচার, জুলুম-নির্যাতন নিপীড়ন অপহরণ হত্যা গুম খুন ভয়ংকর আকার ধারণ করেছেন। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রছাত্রীদের প্রতারণা করা হয়েছে। ফলে ছাত্র এবং জনগণের ঐকবদ্ধ আন্দোলন জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, ইসি এবং ভিসি দুজনেই নির্বাচনকে কলুষিত করেছেন। আ স ম রব খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে জেলে রাখাটা মুক্তিযোদ্ধার চেতনার সঙ্গে বেমানান।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন-সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার এবং যুগ্ম সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here