উলিপুরে দু’সহপাঠির ঝগড়ার ঘটনা গড়াল আদালত পর্যন্ত

0
212

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুর শহরে অবস্থিত এনএস আমিন রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে দু’সহপাঠির ঝগড়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্কুল কর্তপক্ষ বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার উদ্যোগ নিলে একটি পক্ষ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করে। শুধু তাই নয় উদ্ভুদ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়রাণী করতে দেয়া হয়েছে মামলা। এনিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকসহ এলাকার সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৩১ মে) দুপুর সাড়ে বারোটার সময় টিফিন শেষে ক্লাসে প্রবেশ করার সময় ৪র্থ শ্রেণির শিশু ফাহিমা সাবরিন ফাহির গায়ে ধাক্কা লাগে সহপাঠি ইশরাক আল সিয়ামের। এতে সিয়ামকে থাপ্পড় দেয় ফাহি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফাহিকে চর-থাপ্পড় দেয় ইশরাক আল সিয়াম। এরপর সোয়া দুইটার দিকে স্কুল ছুটি হলে ফাহিমার বাবা প্রভাষক ফজলুল হক ঘটনা শুনে মাঝরাস্তা থেকে মেয়েকে নিয়ে আবার স্কুলে আসেন। তিনি খেলারত অবস্থায় ইশরাক আল সিয়ামকে পেয়ে সেখানেই বেধড়ক মারপীট করেন। ঘটনা দেখে শিক্ষকরা দ্রæত ছুটে এসে তাকে নিবৃত করেন। সাথে সাথে আহত সিয়ামকে স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াজেদুল হাসান বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে উলিপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শে দেড়ঘন্টা পর শিশুটিকে আবার স্কুলে ফেরৎ নিয়ে আসা হয়। ঘটনা সিয়ামের বাবা-মাকেও জানানো হয়। এছাড়াও স্কুল চলাকালিন সময় জবরদস্তি করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীকে মারধোর করার অপরাধ স্বীকার করে মুচলেকা দেন ফাহিমার বাবা প্রভাষক ফজলুল হক। স্কুলের পরিচালক শামিম আক্তার আবাসিক শিক্ষার্থী ইশরাক আল সিয়ামের বাবাকে বিষয়টি অবহিত করে মীমাংসার জন্য স্কুলে ডাকেন। ঢাকায় অবস্থানরত সিয়ামের বাবা পরদিন শুক্রবার স্ত্রীসহ উলিপুরে চলে আসেন। তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের ডাকে সারা না দিয়ে সিয়ামকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আবার উলিপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে ফাহিমার বাবা প্রভাষক ফজলুল হক, এনএস আমিন স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াজেদুল হাসান ও স্কুলের পরিচালক শামিম আক্তারের নামে শিশু আইন-২০১৩ এর ৭০ ধারায় মামলা করেন সিয়ামের মা ইরানী।
এ ব্যাপারে সিয়ামের দ্বিতীয় মা ইরানী জানান, আমাদের ছেলেকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করায় মামলা করেছি। আমার ছেলের কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। সে আবোল-তাবোল বকছে। অপ্রকৃতস্ত হয়ে গেছে। উলিপুরে ভাল চিকিৎসা না হওয়ায় তাকে কুড়িগ্রামে বেসরকারি পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেখেছি।
বিষয়টি নিয়ে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: নুরুল হুদা সাংবাদিকদের জানান, শরীরে মারধোরের চিহ্ন নিয়ে শিশুটিকে ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। এসময় তার ঘাড়ে ও কানে ব্যাথা হচ্ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দিলে স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াজেদুল হাসান শিশু সিয়ামকে স্কুলের আবাসিক ভবনে ফিরে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে ওই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা দশ মিনিটে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে চিকিৎসাপত্র দেয়ার পর ফিরে গেলে। তার অভিভাবকরা তাকে পূণরায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। শিশুটির ঘাড়ে সামান্য ব্যাথা ছিল। কানে কোন রক্তের চিহ্ন পাইনি। শারীরিকভাবে সে ভাল ছিল। অভিভাবকরা তাকে বাইরে চিকিৎসা দিতে চাইলে শিশুটিকে রেফার্ড করা হয়।
এ বিষয়ে এনএস আমিন রেসিডেন্সিয়াল আবাসিক স্কুলটির পরিচালক শামিম আক্তার জানান, শিশুটি আহত হয়েছিল। তাকে সুচিকিৎসা দিয়ে উভয় অভিভাবককে নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা ভেস্তে দেয় অপর একটি পক্ষ। তারা স্কুলের উত্তরোত্তর সাফল্যে ইর্ষাণিত হয়ে শিশুটির মাকে ভুল বুঝিয়ে মামলা করে। ২০০৩ সাল থেকে সুনামের সাথে স্কুলটি পাঠদান করে আসছে। চলতি জেএসসি পরীক্ষায় ৮৮ জনের মধ্যে ৭২ জন এ-প্লাস এবং ৪০জন বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও সর্বশেষ পিএসসিতে ৬৬ জনের মধ্যে এ-প্লাস ৪৬জন এবং বৃত্তিপ্রাপ্ত ১৮ জন।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here