উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ চিলমারী শিক্ষক সমাজ

0
220

আরিফুল ইসলাম সুজন, (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলামের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে উপজেলার শিক্ষক সমাজ। চরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অর্থের বিনিময়ে সুযোগ সুবিধা প্রদান করারও অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। স্কুলে অনুস্থিত থেকে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার বিষয়টি প্রকাশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে উপজেলা বাসীর কাছে।
উপজেলার বজরা দিয়ার খাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রিতা মোদক প্রায় গত ৮মাস ধরে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত থাকলেও তিনি বেতন ভাতাসহ সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন নিয়মিত। বিষয়টি শিক্ষা অফিসারের নজরে থাকলেও তিনি কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় শিক্ষক সমাজে আলোচনা-সমালোচনা উঠেছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষিকাকে অনুপস্থিত দেখানো হলেও অজ্ঞাত কারনে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম তাকে নিয়মিত বেতন ভাতাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বজড়া দিয়ার খাতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রিতা মোদক গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ ৩ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেয়ার পর থেকে অনুপস্থিত থেকে ১৬ই মে তিনি উপস্থিত হোন। এরপর আবারো জুনের ১৯ ও ২০ তারিখ উপস্থিত হলেও ০১ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দেখা যায়।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিক মোছাঃ দিলআরা বেগম বলেন,রিতা মোদকের বিষয়ে আমি কয়েকবার মৌখিক ভাবে অফিসে জানিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে রিতা মোদক অনিয়মিত থেকে জুন মাসের ১৯তারিখ উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষর করতে চাইলে আমি বাধা দেই। পরে অবশ্য সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহেদুল ইসলামের ফোনে আমি তাকে তিন দিনের স্বাক্ষর করতে দেই। সে আমাকে কোন ছুটির আবেদন না দিয়েই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। অনুপস্থিত থেকেও যখন তিনি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে জানার পরেই আমি ২৮ অক্টোবর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। এরপরেই মৌখিক ভাবে শুনেছি রিতা মোদক মাতৃত্বকালিন ছুটি নিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষিক রিতা মোদকের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর মা হতে চলেছি। আমি অসুস্থ থাকার কারণে আমার স্বামী সব করেছে। কার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে আমি সঠিক বলতে পারছিনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক শিক্ষক জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই চিলমারীর শিক্ষা ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। দুর্নীতিতে ভরে গেছে শিক্ষা অফিস। বদলী বাণিজ্যসহ স্লিপের টাকার ভাগ নেন তিনি। নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন না। আর চরাঞ্চলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা উৎকোচের মাধ্যমে তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দেন।
এই বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রিতা মোদক ২১জুন আমাকে মাতৃত্বকালিন ছুটির আবেদন দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে সেই ছুটিতেই আছেন। প্রধান শিক্ষকের সুপারিশ ছাড়াই ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে তিনি বলেন আমার কাছ থেকেও ছুটি নিতে পারে। ছুটির বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে না জানানোর  কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রধান শিক্ষককে দায়ি করে বলেন প্রধান শিক্ষক কেন এতদিন পর লিখিতভাবে আমাকে জানালো ? নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন না করার বিষয়ে তিনি বলেন আমি আকষ্মিক ভিজিটে যাই।
অপরদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং সহকারী শিক্ষা অফিসাররাও চলতি বছর উক্ত বিদ্যালয়ে কোন পরিদর্শন করেননি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় গত বছর ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর মাসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদুল ইসলাম পরিদর্শন করলেও আর কেউ সেখানে যায়নি। লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর ২৯ অক্টোবর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহঃ রাশেদুল হক প্রধান জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here