উপকূলীয় ৪ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে

0
243

খবর৭১ঃ ঘূর্ণিঝড় ফনি ধেয়ে আসার আগেই শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের চার লাখ চার হাজার ২৫০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সন্ধ্যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর ২১ থেকে ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

দেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। আর ১৯ জেলার ১৪৭ উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এসব জেলায় চার হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ফনি আসার আগেই দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য এগুলোর বেশিরভাগই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শাহ কামাল বলেন, নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবকসহ রাজনৈতিককর্মীরা উপকূলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, এখনও ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী রয়েছে। তাই সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে। সরকারের নির্দেশনা না পেলে কেউ যেন আশ্রয়কেন্দ্রে ত্যাগ না করেন।

এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দেব না এ জন্য চার হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে।’

৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে অন্যরা এ কাজে অংশ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যার আগে সব লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে, একটি লোককেও রেখে আসা হবে না।

এনামুর বলেন, মানুষের পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব গবাদিপশুকেও সরিয়ে আনতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি উড়িষ্যায় শুক্রবার সকালে হানা দেয়ার পর ভারতের উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অতিক্রম করা শুরু করেছে। এটি আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়বে বলে ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের খবরে বলা হয়েছে।

এতে এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের খবর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল (পুরীর নিকট দিয়ে) অতিক্রম শুরু করেছে।

এটি বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। ঝড়টি শুক্রবার সকাল ৯টায় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে এবং পরে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে।

খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সকাল থেকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছের সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here