ঈশ্বরগঞ্জে ধর্মান্তরিত সবিতাকে নির্যাতনের অভিযোগ

0
504

ফারুক ইফতেখার সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) থেকে
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে এক হিন্দু মেয়েকে ধর্মান্তরিত করার পর বিয়ে করে প্রতারণা ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে সুবিচার না পেলে মৃত্যু ছাড়া আর কোর পথ নেই বলে জানিয়েছেন ধর্মান্তরিত সবিতা।
জানা যায়, ঢাকার একটি গ্রার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকুরীর সুবাদে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামের হেকমত আলীর ছেলে শহীদুল ইসলামের সাথে পরিচয় ঘটে পাবনা জেলার আটগড়ীয়া থানার নাদুরীয়া গ্রামের শ্রীরাম দাস এর মেয়ে সবিতা রাণীর। পরিচয়ের পর তাদের দীর্ঘ দুই বছর প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে রূপ নেয়। সবিতা রাণী ১০জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে ধর্মান্তরিত হয়ে সবিতা বেগম পরিচয়ে ২৮ জুন ২০১৪ সালে এফিডেভিট করে শহীদুল ইসলামের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। এফিডেভিটে ১২লক্ষ ৫০হাজার টাকার কাবিনের কথা উল্লেখ থাকলেও পরবর্তীতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কাজি অফিসে আরেকটি রেজিষ্ট্রি করে যাহাতে সবিতার পিতার নাম শ্রীরাম দাসের পরিবর্তে শাহজাহান ও ভ‚য়া ঠিকানা উল্লেখ করে ৪০হাজার টাকার কাবিন করে প্রতারক স্বামী শহীদুল। বিষয়টি জানার পরও বিয়ে বিচ্ছেদের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বিধায় সবিতা নিরবে সব সহ্য করে নেন।
এভাবেই দীর্ঘ পাঁচ বছর ঢাকায় বিভিন্ন ভাড়াটে বাসায় চলে তাদের সংসার জীবন। এক পর্যায়ে সবিতাকে শহীদুল জানায়, কিছু টাকা হলে সে একটি ঘর তুলে সবিতাকে বাড়ি নিয়ে যাবে। সবিতা তাকে বিশ্বাস করে জীবনের সি ত টাকা সহ তার বাবার বাড়ি থেকে লোন করে প্রায় ১০লক্ষ টাকা স্বামী শহীদুল ইসলামের হাতে তুলে দেয়। সেই টাকা দিয়ে বাড়িতে একটি ঘর ও কিছু জমি ক্রয় করে শহীদুল। কিছুদিন পর শহিদুল ইসলাম সবিতার কাছে সব কিছু গোপন রেখে আরেকটি বিয়ে করে। সবিতাকে ঢাকায় একটি ভাড়াটে বাসায় ফেলে রেখে বাড়িতে চলে আসে এবং সবিতার সাথে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সবিতার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শহীদুল ইসলামের ঠিকানা সংগ্রহ করে সে। গত মার্চ মাসে সবিতা শহীদুলের বাড়িতে এসে উঠে।
গত ২৪ এপ্রিল শহীদুল ইসলাম ও তার পরিবারের লোকজন সবিতাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় সবিতাকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে ময়মনসিংহ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সবিতা ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসা নেন। এদিকে সবিতাকে মারধর ও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পরলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এলাকবাসী সবিতার পক্ষে এগিয়ে আসে। বর্তমানে এলাকাবাসীর আশ্রয়ে এক অজানা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে সবিতার।
বিষয়টি নিয়ে সবিতার সাথে কথা বললে, অঝোরে কান্নায় বিলাপ করতে থাকে সবিতা। কান্না জড়িত কন্ঠে সবিতা জানায়, ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে মৃত্যু ছাড়া তার আর কোথাও যাওয়ার মতো জায়গা নেই তাঁর।
শহীদুল ইসলামের বাবা হেকমত আলী বলেন, তার ছেলে বাড়ি না থাকায় সবিতাকে তারা ঘরে তুলতে পারছেন না। ছেলে বাড়িতে এলে তখন বিষয়টি দেখবেন।
উচালিখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদুল প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েটিকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে। কিন্তু তা গোপন রেখে ফের এলাকায় বিয়ে করে। এখন মেয়েটিকে বাড়িতে জায়গা দিচ্ছে না। পাশের এক বাড়ির আশ্রয়ে রয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. বদরুল আলম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে মেয়েটির পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here