ঈদুল ফিতরে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৩৩৯, আহত ১২৬৫

0
347

খবর ৭১ঃ ঈদুল ফিতরে দেশের বিভিন্ন সড়কে-মহাসড়কে ২৭৭টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৫টি ঘটনায় ৪০৫ জন নিহত ও ১ হাজার ২৭৪ জন আহত হয়। শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেখানে ‘ঈদ যাত্রায় সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দূর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এবারের ঈদের আগে যাত্রাপথে সব তদারকি সংস্থার সক্রিয় অবস্থানের কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে তদারকি না থাকায় সড়ক দূর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।’

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামালের মন্তব্য, ‘রাজধানীতে একটি বাসও রাস্তার পাশ ঘেঁষে সোজা হয়ে দাঁড়ায় না। আইন না মেনে কে কত আগে যাবে সেই প্রতিযোগিতা চলছে। মূলত দায়িত্বহীনতা থেকে আইন না মানার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র বলেছে, যারা মোটরসাইকেল চালায় তাদের মাথায় হেলমেট পড়তে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা হেলমেট পড়ে না, পরিবারের সদস্যদের মাথায়ও হেলমেট থাকে না।’

সুলতানা কামালের ভাষ্য, ‘প্রধানমন্ত্রী সড়ক দূর্ঘটনার বিষয়টি এবার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। তিনি ৪-৫টি নির্দেশনাও দিয়েছেন, পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তার এই নির্দেশনা মেনে কতখানি কাজ করেন, সেটাই দেখার বিষয়।’

সংগঠনের মহাসচিব জানান, গত ১১ জুন থেকে ২৩ জুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩ দিনে সারাদেশে ২৭৭টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে নৌ-পথে ১৮টি দূর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়। রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেন ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়।

সংগঠিত দূর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায়— ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাস, ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২ দশমিক ২২ শতাংশ নছিমন-করিমন, ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ কার-মাইক্রো ও ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ অনান্য যানবাহন দূর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়— মোট সংগঠিত দূর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ০২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩২ দশমিক ৭২ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়া, ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ১ দশমিক ১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়া, ০ দশমিক ৭৩ শতাংশ চাকায় ওড়না প্যাঁচিয়ে ও ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ অন্যান্য কারণে হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দূর্ঘটনার পেছনে বেশকিছু কারণ উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে— ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, বিরতিহীন/বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক ও হেলপারের মাধ্যমে যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা, সড়ক-মহাসড়কে বেহাল দশা।

সংগঠনটি বেশকিছু সুপারিশমালা উপস্থাপন করেছে। এগুলো হলো— জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, প্রশিক্ষিত চালক পেতে জাতীয় পর্যায়ে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহন, মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুত গতির যানের জন্য পৃথক লেন; মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়ন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত, ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাত-আন্ডারপাস-ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here