ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ ১৬ ফেব্রুয়ারি

0
250

খবর ৭১ঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কক্সবাজার জেলার টেকনাফের প্রায় একশ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন।
৩ মাসের জন্য বন্ধ কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক
১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে। স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আগ্রহী এসব ইয়াবা কারবারিদের ডাকে সাড়া দিয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল।

সম্প্রতি ইয়াবার বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এই অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা পাচারকারীদের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।

এরপর অনেক ইয়াবা পাচারকারী স্বপ্রণোদিত হয়েই আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করে। অনেকেই ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকেও ফিরে এসেছেন।

মাদকদ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা এখন ‘বিষফোঁড়া’য় রূপ নেয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধে’ নেমেছে। সারা দেশে একযোগে চলছে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান। চলমান অভিযানে প্রতিদিনই ধরা পড়ছে মাদকের ছোটবড় চালান। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে আটক হচ্ছে ইয়াবার চালান।

এদিকে গত জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হয়ে আসার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ‘ক্রসফায়ারে’ মাদক চোরাকারবারি নিহতের ঘটনাও ঘটছে। ‘ক্রসফায়ার’ থেকে প্রাণ বাঁচাতে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিদের একটি অংশ ‘আত্মসমর্পণ’ করতে পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের সংখ্যা প্রায় ৭০ জন বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, শখানেক ইয়াবা কারবারি রয়েছেন পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে। তাদের কলাতলী বাইপাস সড়কে অবস্থিত জেলা পুলিশ লাইনের অভ্যন্তরে ইনসার্ভিস পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার ভবনে রাখা হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার আত্মসমর্পণের নির্ধারিত দিন পর্যন্ত আত্মসমর্পনকারীদের তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে।

ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ দিন ধার্য করেছে বলে রোববার রাত ১০টায় নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট একজন উপ-মহাপরিদর্শক। তবে কতজন আত্মসমর্পণ করবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ইয়াবা কারবারিদের অনেকেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।

ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়াটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনলে তিনিও এতে সম্মতি দিয়েছেন। এরপরই জেলা পুলিশ এ নিয়ে কাজ শুরু করে। ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি থাকবেন।

এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী, সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার চৌধুরী, পুলিশ প্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোনো মামলা রুজু হবে না। পুরনো মামলাগুলো তাদের আইনিভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের সুপথে ফিরতে সরকার সহায়তা করবে।

গত বছরের ৪ মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর প্রায় প্রতিদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুধু কক্সবাজারেই ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে টেকনাফে নিহতের সংখ্যা ৩৯ জন। তাদের ২৫ জন টেকনাফের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ঘাট এলাকায় র‌্যাব-৭ এর অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ইয়াবা কারবারি নিহত হন।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় ১ হাজার ১৫১ জনের নাম রয়েছে। এরমধ্যে ৭৩ জন প্রভাবশালী ইয়াবা কারবারি রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা ওই হালনাগাদ তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিসহ ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি এবং বদির ৩ ভাই, ১ বোন, ভাগ্নেসহ ২৬ জন আত্মীয়ের নাম রয়েছে।

আরেক সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমানে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর এক পুত্র, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও তার পুত্রের নাম রয়েছে। আত্মসমর্পণ করতে চান ‘ক্রসফায়ারে নিহত’ অনেকের স্বজনও।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, র‌্যাব-পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান এবং ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনায় চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিরা আতঙ্কে আছেন। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেকেই যোগাযোগ করেছেন আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সঙ্গে।

এ বিষয়ে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি জানান, টেকনাফের অনেক ইয়াবা কারবারি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করার জন্য তার কাছে আসছেন। তিনি তাদেরকে আত্মসমর্পনের জন্য অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশা করেছেন সরকারের এ উদ্যোগের ফলে সীমান্ত জনপদ টেকনাফ আগামীতে অনেকটা ইয়াবামুক্ত হয়ে যাবে।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here