ইসলামে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার গুরুত্ব

0
437

খবর ৭১:ইসলামে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এর জন্য খুবই তাগিদ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-“তোমরা নামায পড়ো নামাযিদের সাথে।

” অর্থাৎ তোমারা জামাতসহকারে  নামায পড়ো। (সূরা বাকারা)

এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইন, তাফসিরে বায়দাবি ও তাফসিরে কাশশাফ ইত্যাদিতে বলা হয়েছে- “তোমরা মুসল্লিদের সঙ্গে জামাতে নামায পড়ো। একা একা পড়ো না। ”

নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন-  “জামাতের সাথে নামাযে সাতাশ গুণ বেশি পূণ্য নিহিত রয়েছে। ” (বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-  “একা নামায পড়া অপেক্ষা দু’জনে জামাতে নামায পড়া উত্তম। দু’জন অপেক্ষা বহুজন মিলে জামাতে নামায পড়া আল্লাহর কাছে আরো বেশি পছন্দনীয় এবং উত্তম। ” (আবু দাউদ)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-  “যে ব্যক্তি এশার নামায জামাতের সাথে পড়বে, সে অর্ধরাত বন্দেগির সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সাথে পড়বে, পূর্ণ রাত বন্দেগি করার পূণ্য লাভ করবে। ”  (তিরমিযি)

এজন্য নবীজি সা. কখনো জামাত তরক করতেন না।

এমনকি অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি হাঁটতে পারতেন না, তখনো দুই সাহাবির কাঁধে ভর করে পা টেনে টেনে নামাযের জামাতে হাজির হয়েছেন। জামাতবিহীন একা একা নামায পড়েননি।

এমন কি নবীজি তো এতটুকুও বলেছে-  “আমার তো মনে চায় মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বলব এবং কাউকে নামায পড়াতে বলব আর আমি আগুনের অঙ্গার নিয়ে যাব, যে আজান শুনার পরও মসজিদে জামাতে হাযির হওয়ার জন্য বের হয়নি- তার ঘর জ্বালিয়ে দিই। ” (বুখারি, মুসলিম)

তিনি আরো বলেন- “কোথাও যদি তিনজন মানুষ থাকে, আর তারা যদি জামাতে নামায না পড়ে, তাহলে শয়তান তাদের ওপর বিজয়ী হয়ে যাবে। কাজেই তুমি জামাতে নামায পড়াকে কর্তব্য মনে করো। ”  (নাসায়ি)

তিনি আরো বলেন- “সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিশাপ, যে আজান শুনেও জামাতে উপস্থিত হয় না। ” (মাজমাউজ্জাওয়াইদ)
চিন্তার বিষয় হল, নবীজি যেখানে জামাতে অনুপস্থিত মুসাল্লির ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেছেন, সেখানে যে বেনামাযি, তার শাস্তি যে  কত ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়।

বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন- “আমরা কোনো সাহাবিকে জামাত থেকে অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি। জামাত থেকে সেই ব্যক্তিই অনুপস্থিত থাকতে পারে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিও দুইজনের সাহায্যে জামাতে এসে হাজির হত। নবী সা. হেদায়াত এবং নাজাতের যে রাস্তা আমাদের বাতলিয়েছেন, তাতে আজান শুনে মসজিদে জামাতে হাজির হওয়াও অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি কাল কিয়ামতে আল্লাহ সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়, সে যেন জামাতের সাথে নামায পড়ে। কারণ, আল্লাহপাক স্বীয় নবীকে হিদায়াতের যে তরিকার তালিম দিয়েছেন, তাতে বিশিষ্টভাবে এটাও আছে- যে ব্যক্তি মুনাফিকের মত মসজিদে না গিয়ে ঘরে একা নামায পড়ে, সে তার নবীর তরিকাকে ছেড়ে দিলো। আর যে নবীর তরিকাকে ছেড়ে দিলো, সে পথভ্রষ্ট। ” (মুসলিম, নাসায়ি)

মক্কার তখনকার প্রশাসক হযরত উত্তাব ইবনে উসায়েদ রাযি. নবীজির মৃত্যুসংবাদ শোনার পর মক্কাবাসীর এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন- “যদি কারো ব্যাপারে জানা যায়, সে আজান শুনে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়ে না, তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হবে। ” (কিতাবুস সালাত লি ইবনে কায়্যিম)। হযরত আবুদ দারদা রাযি. বলেন- “আল্লাহর শপথ, উম্মাতে মুহাম্মদির জন্য জামাতের সাথে নামায পড়া থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে বলে আমি জানি না। ” (বুখারি)

ইসলামে জামাতে নামায পড়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটা আহনাফের কাছে সুন্নাত মুয়াক্কাদা হলেও আমলগতভাবে ওয়াজিব। এটা ইসলামের বড় একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর দ্বারা ইসলামের শান প্রকাশ পায়। পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ হয়। ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ঐক্যবদ্ধতা প্রকাশ পায় এবং তা আরো নিবিড় হয়। পারস্পরিক খোঁজ-খবর নেয়া সহজ হয়। সাহাবায়ে কেরাম যখন আজান শুনতেন, দোকানপাট বন্ধ করে মসজিদে হাজির হতেন।

“যে ব্যক্তি জামাত ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস বনিয়ে নেবে, সে সাংঘাতিক গোনাগার, ফাসিক। তার সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য। যে তার প্রতিবেশিকে জামাত ছাড়ার কারণে সতর্ক করে না, তাকে সংশোধন করার চেষ্টা করে না, সে গোনাগার হবে। ” (কবীরী)

“যে এলাকার লোকেরা জামাত পরিত্যাগ করে ঘরে নামায পড়ার অভ্যাস করবে, তাদের সে বদঅভ্যাস দূর করতে প্রয়োজনে অস্ত্রের মাধ্যমে জেহাদ করা ওয়াজিব। ” (মিরকাত শরহু মিশকাত)

আগেকার বুযুর্গদের কারো যদি এক ওয়াক্তের জামাত ছুটে যেত, এটাকে মহা-মসিবত মনে করতেন। সাতদিন পর্যন্ত রোনাজারি করতেন, আফসোস করতেন। আর তাকবিরে উলা ছুটে গেলে তিনদিন পর্যন্ত রোনাজারি ও আফসোস করতেন। (এহইয়ায়ে উলুমে দ্বীন)

অতএব আমাদের ওপর কর্তব্য হল পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে নামায পড়া। শৈথিল্য না করা। তাকবিরে উলা না ছাড়া। প্রথম সারিতে ইমামের পেছনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। প্রথম কাতার দ্বিতীয় কাতার থেকে উত্তম। দ্বিতীয় কাতার তৃতীয় কাতার থেকে উত্তম। এভাবে শেষ কাতার পর্যন্ত। আগের কাতারে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা।

মহান আল্লাহ যখন জামাতের ওপর স্বীয় রহমত নাযিল করার ইচ্ছা করেন, প্রথমে ইমাম থেকে শুরু করেন। তারপর সেই মুসল্লির ওপর রহমত নাযিল করেন, যে সরাসরি ইমামের পেছনে থাকে। তারপর তাদের ওপর যারা প্রথম কাতারে ডানদিকে থাকে। তারপর তাদের ওপর যারা প্রথম কাতারে বামদিকে থাকে। এজন্যই যে ব্যক্তি ইমামের সরাসরি পেছনে থাকে, সে একশত নামাযের পূণ্য লাভ করে। যে প্রথম কাতারে ডানদিকে থাকে, সে পঞ্চাশ নামাযের পূণ্য লাভ করে। আর যে প্রথম কাতারে বামদিকে থাকে, সে পঁচিশ নামাযের পূণ্য লাভ করে।

শহরের মসজিদগুলোর জামাতে অনেক লোক সমাগম হয়। গ্রামের মসজিদগুলোতে তেমনটা হয় না। গ্রামের মসজিদগুলো গরিব, বিজন ও বিরান বলে অনুভূত হয়। আল্লাহ চান, মসজিদগুলোকে আবাদ করা হোক। মসজিদ আবাদ হয় জামাতে মুসল্লিসংখ্যা বেশি হওয়ার দ্বারা। মসজিদ সুরম্য অট্টালিকা সদৃশ হোক, আর নামাযের জামাত ছোট হোক, এটা ইসলামের চাহিদা নয়। যে মসজিদে মুসল্লিসংখ্যা বেশি, বাঁশ-বেতের হলেও সে মসজিদ আবাদ এবং জীবন্ত। যে মসজিদে জামাত ছোট হয়, মুসল্লিসংখ্যা কম, সেটি অট্টালিকা হলেও অনাবাদ এবং জৌলুসহীন। আমরা মসজিদকে অট্টালিকা বানাতে বেশি আগ্রহী; কিন্তু জামাতকে বড় করতে এবং নিয়মিত করতে ততোধিক গাফেল। অথচ এটা দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। মসজিদও কাল কিয়ামতে আমাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে। আবার এ মসজিদ তার মুসল্লিদের পক্ষাবলম্বন করে তাদের বেহেশতে নিয়ে যাবার কার্যকর চেষ্টাও করবে।

ইনশা আল্লাহ আমরা আরো তৎপর হবো। বড় বড় জামাতের মাধ্যমে মসজিদকে আবাদ করার চেষ্টা করব। জামাতে হাজির হতে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করব না। জামাতের সাথে নামায পড়ার সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করব। আল্লাহ আমাকে আপনাকে সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here