আসন ধরে রাখতে আ’লীগ- পুণঃরুদ্ধারে জাপা: সুযোগ সন্ধানে গণফ্রন্ট-এনপিপি

0
439

আবু বক্কর সিদ্দিক, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
আসন্ন ১৩ ই মার্চ ২৯, গাইবান্ধা-১, (সুন্দরগঞ্জ) শূণ্য আসনে দ্বিতীয় দফা উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৪ প্রার্থী। এরা হলেন- বাংলাদেশ আ’লীগ (নৌকা) মনোনীত- শিল্পপতি আফরোজা বারী, জাতীয় পার্টি- জাপা (লাঙ্গল) মনোনীত- ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গণফ্রন্ট (মাছ) মনোনীত- অধ্যক্ষ এম শরিফুল ইসলাম ও ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি (এনপিপি) মনোনীত- জিয়া জামান খাঁন। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়ন বিশিষ্ট এ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫’শ ৫৬। এরমধ্যে পুরুষ- ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯’শ ৩৪ ও নারী- ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬’শ ২২ জন। লাঙ্গলের ঘাঁটি নামে পরিচিত হলেও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তীতে প্রথম দফা উপ-নির্বাচনে আ’লীগ (নৌকা)’র বিজয়ে আসনটি হাত ছাড়া হয় জাপা (লাঙ্গল)’র। এরপূর্বে ২০০১-এর নির্বাচনেও জাপার হাত ছাড়া করা এ আসনে আসন্ন দ্বিতীয় দফা উপ- নির্বাচনে ধরে রাখতে চায় আ’লীগ আর পুণরুদ্ধারে মরিয়া জাপা।
এদিকে, অপর এক শ্রেণীর ভোট ব্যাংক হাতে নেয়ার সুযোগ সন্ধানে রয়েছে গণফ্রন্ট ও এনপিপি। এ নিয়ে উপজেলার সর্বত্র প্রবাহমান ভোট বাজারে এমন আলোচনায় মূখরিত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন তথ্য নির্ভর সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় পার্টির শাসনামল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত জাপা (লাঙ্গল) মনোনীত প্রার্থী হাফিজুর রহমান প্রামাণিক ও পরবর্তীতে ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৎকালীণ জামায়াত (দাড়িপাল্লা)’র সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজয় লাভ করে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি নিজের অযোগ্যতাসহ নানাবিধ কারণে জন প্রিয়তা থেকে জন শূন্যের কোটায় পড়েন। অপরদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় ঐক্য জোটবদ্ধতার ফলে ২০০১-এর নির্বাচনে জোট তথা জামায়াত (দাড়িপাল্লা) মনোনীত প্রার্থী- আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজের কাছে হেরে যান জাপা মনোনীত প্রার্থী ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা। এরপর আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারামলে পুণঃরায় বিপুল পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে জোট প্রার্থী আজিজকে হারিয়ে নির্বাচিত হয় মহাজোট তথা জাপা মনোনীত প্রার্থী কর্ণেল (অবঃ) ডাঃ আঃ কাদের খাঁন। আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মুত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত সাবেক এমপি ঘোড়ামারা আজিজ আত্মগোপনে আর কাদের খাঁন এমপি লিটন হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন। জাতীয় পার্টির শাসনামল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আ’লীগ (নৌকা) মনোনীত প্রার্থীগণ প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলে ৩য় স্থান অধিকার করেছিলেন। এ আসনে বারবার জাপা মনোনীত প্রার্থীগণই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিপুল সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে আসায় ‘লাঙ্গলের ঘাঁটি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাখা জাপা এ আসনটি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাত ছাড়া করলে ১ লাখ ১৮ হাজার ১’শ ৫২ ভোট পেয়ে আ’লীগ (নৌকা) মনোনীত মরহুম মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপি নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাপা (লাঙ্গল) মনোনীত সাবেক এমপি কর্ণেল (অবঃ) ডাঃ আঃ কাদের খাঁন পেয়েছিলেন- ১৩ হাজার ৪৪ ভোট। জাতীয় পার্টি- জেপি (বাই-সাইকেল) মনোনীত প্রার্থী রেজিয়া বেগম- ১ হাজার ২৩, স্বতন্ত্র প্রার্থী- সোহেল রানা সোনা ৬’শ ৫১ ও সাবেক এমপি মরহুম মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন পতœী সৈয়দা খুরশীদ জাহান স্মৃতি পেয়েছিলেন- ৪শ’ ৮৪ ভোট। বিএনপি বা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। ফলে আসন্ন এ উপ-নির্বাচনেও বিএনপি বা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে। চলতি ১০ম জাতীয় সংসদ মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামের মাষ্টারপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে আততায়ীদের ছোঁড়া গুলিবিদ্ধ হন সরকার দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। তাঁকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে; সেখানে তিনি চিকিৎসাধীনাবস্থায় মারা যান। ফলে প্রথম দফা আসনটি শূণ্য হলে ২০১৭ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে ৯০ হাজার ১’শ ৬৯ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন- ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আ’লীগ (নৌকা) মনোনীত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা আহমেদ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি- জাপা (লাঙ্গল) মনোনীত প্রার্থী- ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী পান ৬০ হাজার ১’শ ভোট। এ নির্বাচনে জেপি মনোনীত প্রার্থী ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা- ১ হাজার ২’শ ৯৩, জাসদ’র এ্যাড. মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক- ২’শ ৭৭, গণফ্রন্ট’র অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম- ১’শ ৫৪, এনপিপি’র জিয়া জামান খাঁন- ১ হাজার ১৯ ও জাপা বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী- ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন সরদার পান ১২ হাজার ২’শ ৩৩ ভোট। এ নির্বাচনে ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর বিকালে নিজস্ব মাইক্রোবাসযোগে বাড়ি থেকে ঢাকা যাবার সময় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১৯ ডিসেম্বর সকালে ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীনাবস্থায় মারা যান এমপি গোলাম মোস্তফা আহমেদ। ফলে একই মেয়াদে আসনটি ফের শূণ্য হলে নির্বাচন কমিশন পুণঃরায় উপ- নির্বাচনের জন্য তফশীল ঘোষণা করেন। আসন্ন এ নির্বাচনে উল্লিখিত ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আসন্ন এ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার- জিএম সাহাতাব উদ্দীন কর্তৃক গত ৪ ফেব্রুয়ারী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণকে রিটার্নিং অফিসার বা, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়ন পত্র জমাদানের দিনক্ষণ নির্ধারণ পূর্বক গণ বিজ্ঞপ্তি জারী করেন। সে মোতাবেক দশম জাতীয় সংসদ মেয়াদেই আগামী ১৩ই মার্চ এ আসনের দ্বিতীয় দফা উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ঘোষিত তফশীলে জানান, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন, ১৬ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) মনোনয়ন পত্র যাচাই- বাছাই, ২৩ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) প্রার্থীতা প্রত্যাহার, ২৪ ফেব্রুয়ারী (শনিবার) প্রতীক বরাদ্দ ও ১৩ মার্চ (মঙ্গলবার) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here