আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৩ সাবেক এমপির পুত্র ও বর্তমান এমপির হালচাল

0
400

মোঃ জহির রায়হান-সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে ২০১৮ সালকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর হিসেবে উল্লেখ করায় সারা দেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলাতেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সকল দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা। সিরাজগঞ্জের অন্যান্য আসনের ন্যায় সংসদীয় আসন-৬৪, সিরাজগঞ্জ-৩ এর প্রার্থীরাও জনসমপৃক্ততা বাড়াতে ও দলের নেতা কর্মীদের মন জয়ের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ।
রায়গঞ্জ উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও তাড়াশ উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ ৩ আসনে থানা সংখ্যা ৩ টি। রায়গঞ্জ-তাড়াশ-সলঙ্গা থানা নিয়ে গঠিত এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৩১ জন। তন্মধ্যে সলঙ্গা থানার অন্তর্গত সলঙ্গা,হাটিকুমরুল ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন উক্ত সংসদীয় আসনের বাইরে উল্লাপাড়া আসনের অধীন। রায়গঞ্জ উপজেলাধীন এলাকার মোট ভোটার আড়াই লক্ষের ও বেশী। বর্তমান সংসদ সদস্য গাজী আমজাদ হোসেন মিলন ব্যতীত আগের দুই এমপি রায়গঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।
১৯৯১ হতে ২০০১ পর্যন্ত টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান। ১৯৮৬,২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সদ্য প্রয়াত ইসহাক হোসেন তালুকদার। ২০১৪ সালে ইসহাক হোসেন তালুকদার মৃত্যু বরন করলে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গাজী আমজাদ হোসেন মিলন।
ম ম মিলন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিতর্ক যেন তার পিছু ছাড়ছেই না। তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হকের উপর সন্ত্রাসী হামলায় আসামী হন এমপি মিলন ও তার পরিবারের সদস্যরা যদিও চার্জশীটে তাদের নাম বাদ দেয়া হয় আর তাতে নারাজি দেন মামলার বাদী। তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হক ও সাধারন সম্পাদক সঞ্জিত কুমার কর্মকারের নেতৃত্বে তাড়াশ উপজেলাধীন ৮ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা সরাসরি এমপি মিলনের বিরোধীতা করেছেন। এমপি মিলন কর্তৃক দলীয় কর্মীকে মোবাইলে হুমকি দেয়ার রেকর্ডটি এক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তাড়াশ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা এমপি মিলনের মেয়ের জামাই গোলাম রব্বানী সুর্যের টি আর, কাবিখা নিয়ে করা দুর্নীতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ায় কোনঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। জেলা প্রাশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে কট্যুক্তি করে তিনি বেশ সমালোচনার জন্ম দেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এমপি মিলন বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন বলে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই সকল কারনে অনেকেই মনে করেন এবারের নির্বাচনে এমপি মিলন দলীয় মনোনয়ন পাবেন না।
সদ্য প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম ইসহাক হোসেন তালুকদার এর ছেলে এ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান ইমন আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য প্রচার প্রচারনা ও জনসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটালেও বাবার রেখে যাওয়া ঋন নিয়ে বিপাকে আছেন বলে জানা যায়। রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক হানিফউদ্দিন সরকার বলেন-“ মরহুম ইসহাক হোসেন তালুকদারের নিকট ১৬ লক্ষ টাকা পাবো কিন্তু সেই টাকা পাবার কোন আশাই দেখছি না। আমার মত অনেক লোক সাবেক এমপি মরহুম ইসহাক সাহেবের নিকট ঠিকাদারী , চাকুরি , জমি ক্রয় ইত্যাদি বাবদ টাকা পাবে কিন্তু ইসহাক সাহেবের স্ত্রী বা তার দুই ছেলে ধামাইনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন তালুকদার ও মনোনয়ন প্রত্যাশী ইমন তালুকদার আমাদের টাকা না দিয়ে তাল বাহানা করছে। তাই ইমন তালুকদার দলীয় মনোনয়ন পাবে
না বলেই জানি আর মনোনয়ন পেলেও বিপুল ভোটে হেরে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে”।
এ ব্যাপারে ইমন তালুকদার বলেন-“ অধ্যাপক হানিফউদ্দিন সাহেবের পাওনা টাকার ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য থাকার কথা না। সে যদি টাকা পায় আমাদেরকে এসে বলুক কিন্তু সেতো কোনদিন পাওনা টাকার কথা বলেন নাই”।
হাটপাঙ্গাসী ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারন স¤পাদক আলাউদ্দিন মল্লিক বলেন-“ আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকুরীর জন্য সাবেক এমপি মরহুম ইসহাক হোসেন তালুকদারকে আড়াই লক্ষ টাকা এনে দেই। কিন্তু আমার চাকুরী হয় নাই এবং ইসহাক সেন সাহেবের মৃত্যুর পরে আমাকে এ পর্যন্ত ৬২ হাজার টাকা দিয়েছে বাকি টাকা আমি এখনো পাই নাই। আমার মত এই হাট পাঙ্গাসী ইউনিয়নে অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন কারনে টাকা দিয়েছিল কিন্তু ইসহাক সাহেব মারা যাওয়ার পরে তার পরিবার থেকে টাকা গুলো পরিশোধের কোনই উদ্যোগ নেয়া হয় নাই । আমার এই পাওনা টাকার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সহ জেলা আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই অবগত আছেন”।
এই ব্যাপারে ইমন তালুকদার প্রতিবেদককে বলেন-“ এই ব্যাপারে আপনার এত আগ্রহ কেন? এই পাওনার বিষয়ে আমি ও আলাউদ্দিন বুঝবো, আমরা রাজনীতি করি এমন হাজারো কথা থাকবেই”।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের নেতা বলেন-“ সাবেক সংসদ সদস্যের পরিবার থেকে বা বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেলে উক্ত আসনে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ক্লীন ইমেজের নতুন ও যোগ্য কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে সকল আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী এক সাথে হয়ে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো বলে বিশ্বাস করি”।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here