আ’লীগপন্থীদের ভরাডুবিতে যা বললেন নেতারা

0
334

খবর ৭১:সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সেশনের নির্বাচনে বিএনপিপন্থীদের নীল প্যানেল সভাপতি-সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল একটি সহসম্পাদকসহ চারটি পদে জয়লাভ করেছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও দলটির সমর্থকদের এমন ভরাডুবির নেপথ্যে বেশকিছু রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনজীবী ভোটাররা নির্বাচনে দুটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ। আর দ্বিতীয়টি, আপিল বিভাগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আটকে দেওয়া।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী মনে করেন, এস কে সিনহার বিরুদ্ধাচরণ করা আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের ভরাডুবির অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের বিষয়ে সরকার ও তার সমর্থিত আইনজীবীরা যে বিরূপ ভূমিকা রেখেছিল, তা সাধারণ আইনজীবীদের কাছে পছন্দনীয় বা গ্রহণযোগ্য ছিল না। এছাড়াও নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির হাতে রেখে তাদের চাকরির যে শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, তাও আইনজীবীরা সহজভাবে নেননি। এসব কারণেই তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের ভোট দেননি।’

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগে স্থগিত করাটাকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের পরাজয়ের তৃতীয় কারণ বলেও মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের সাজার মামলায় কনিষ্ঠ আইনজীবীরা শুনানি করলেই হাইকোর্ট জামিন দিয়ে দেন। তবুও হাইকোর্ট তাকে জামিন দিল, কিন্তু আদেশ একটু ঘুরিয়ে দিল। এরপর সেই আদেশের ওপর আপিল বিভাগ আবার হস্তক্ষেপ করল। এর ফলে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে যে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তা আইনজীবীরা পছন্দ করেননি।’

পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘সভাপতি ও সম্পাদক পদে বিজয়ী আর পরাজিত প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান খুবই কম ছিল। অন্যান্য পদে কী হলো জানি না!’

তিনি দাবি করেন, ‘আমার যতদূর মনে হচ্ছে, বিচারপতি এস কে সিনহার প্রসঙ্গে আইনজীবীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যার কারণে একশ’র মতো ভোট এদিক-ওদিক হয়েছে। আর এই ভোটের কারণেই সাদা প্যানেলের পরাজয় হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদ্যনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের প্রসঙ্গটি ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগে আটকে দেওয়ার পেছনে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, তার প্রতিবাদ জানাতে সাধারণ আইনজীবীরা বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলকে জয়যুক্ত করেছে।

জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর সরকার যে হস্তক্ষেপ করছে, এটা মানুষ পছন্দ করে না। আর প্রধান বিচারপতিকে (এস কে সিনহা) তারা যেভাবে বিদায় দিয়েছেন, সেটাও যথাযথ হয়নি। তারপর তারা মাসদার হোসেন মামলা নিয়ে গেজেট (অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা) করেছে, এটাও মানুষ পছন্দ করেনি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিনকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাতে মনে হচ্ছে—বিচার বিভাগ সরকারের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা আমাদের নির্বাচিত করেছে। দেশের কোথাও যে গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার নেই, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটেছে।’

উল্লেখ্য, সভাপতি পদে নীল প্যানেলের অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ২৩৬৯ ভোট পেয়ে আবারও বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ২৩১৫টি। তাদের ভোট ব্যবধান ছিল ৫৪টি। এবারের নির্বাচনে ৬ হাজার ১৫২ ভোটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৬৫ আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ৪৪১ ভোট বেশি পেয়ে টানা ষষ্ঠবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট এসকে মো. মোরসেদ।

বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সহসভাপতি ড. মো. গোলাম রহমান ভুইয়া, এম গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সহসম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন, সদস্যপদে মাহফুজ বিন ইউসুফ, সাইফুর আলম মাহমুদ, মো. আহসান উল্লাহ ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বিজয়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে সাদা প্যানেল থেকে সহসম্পাদক পদে মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, শাহানা ও শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া জয়লাভ করেছেন।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here