আমি এখন শিবির করি না, আওয়ামী লীগ করি’

0
244

খবর৭১ঃ‘আমি এখন শিবির করি না, আওয়ামী লীগ করি। তোর মতো সাংবাদিককে আমি মেরে ফেলবো। এভাবে বলতে বলতে সদরুল আমিন রিপন নামে সাবেক শিবির নেতা আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছে।’

মঙ্গলবার বিকালে এভাবে হাসপাতালের বেডে কাতর আহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু এসব কথা বলেন।

এর আগে স্বাধীনতা দিবসের দিনে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র একটি পক্ষের ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হন সাজু।

হাতীবান্ধার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাজু দৈনিক মানববকণ্ঠের লালমনিরহাট প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তাকে গুরতর আহত অবস্থায় প্রথমে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলা নিবার্চনে জয়-পরাজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরাজিত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ার হায়াত খানের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ পৃথক পৃথকভাবে হাতীবান্ধার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্প্যমাল্য অর্পণ করেন।

পরে হাতীবান্ধা বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগের বাচ্চু-সেলিম গ্রুপের সঙ্গে সরওয়ার-ভেলু সমর্থিত নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এই অবস্থায় টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে বেশকিছু লোক লাঠি-সোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মেডিকেল মোড়ের দিকে আসতে থাকে। পথিমধ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু সশস্ত্র ওই গ্রুপের ছবি তুলতে গেলে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়।

সেখানে সিরাজুল সাজুকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম হোসেনের খালাতো ভাই ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের এক সময়ের শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত রিপন ও তার ছোট ভাই খোকন। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিক সাজুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু বলেন, ‘আমি ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বেড় করতেই আওয়ামী লীগ নেতা সেলিমের খালাতো ভাই ও শিবির ক্যাডার রিপনসহ ৩ জন ছুটে এসে আমাকে মারধর শুরু করে। এ সময় রিপন আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে বলেন যে, ‘আমি এখন শিবির করি না, আওয়ামী লীগ করি। তোর মতো সাংবাদিককে আজ আমি মেরেই ফেলবো’। পরে জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে’।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতীবান্ধার গোতামারী এলাকার বাসিন্দা সদরুল আমিন রিপন এলাকায় সবার কাছে শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তবে তার খালাতো ভাই ও নব্য আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে পরিচিত সেলিম হোসেনের সুবাধে রিপন এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা ও উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ছাড়াও অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি তুলেছে গণমাধ্যমকর্মীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, লালমনিরহাট ইউনিটের সভাপতি খোরশেদ আলম সাগর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভিতর লুকিয়া থাকা পাকিস্তানি দোশর শিবির ক্যাডার রিপন ও তার লোকজন সাংবাদিক সাজুকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরতর আহত করেছে। তাই সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় স্বাধীনতা দিবসে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।’

হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগের দুগ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তবে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here